ই-স্পোর্টসের স্বীকৃতি যুগান্তকারী, বাস্তবায়নে প্রস্তুত আমরা: আনাস খান

By বিশেষ প্রতিনিধি :

3 Min Read
আনাস খান

এক সময় শুধু বিনোদন হিসেবেই দেখা হতো ভিডিও গেম খেলা। সমাজে ‘গেম খোর’ তকমা নিয়ে গেমারদের শুনতে হতো নানা কথা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন গেম খেলা কেবল অবসরের খোরাক নয়, এটি হতে পারে ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার—একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা। আর সেই পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ।

সম্প্রতি সরকার ই-স্পোর্টসকে ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন প্রযুক্তি পণ্যের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড গিগাবাইট-এর কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা মো. আনাস খান। নিজে একজন গেমার, উদ্যোক্তা এবং কমিউনিটি বিল্ডার হিসেবে প্রায় দুই দশক ধরে তিনি কাজ করে আসছেন বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস প্রসারে।

‘আমি প্রথমে শুকরিয়া আদায় করি,’ কথার শুরুতেই আনাস খান বলেন, ‘অনেকদিন পরে স্পোর্টস গেমারদের জন্য একটা আস্থার জায়গা এসেছে। ২০০৪-০৫ সাল থেকে আমরা ডাব্লিউসিজি (ওয়ার্ল্ড সাইবার গেমস) নিয়ে কাজ করছি। আজ সেই পরিশ্রমের ফল দেখতে পাচ্ছি।’

এই স্বীকৃতি আসা পর্যন্ত যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, সেটিও উঠে আসে তার কথায়। গেমার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কমিউনিটি—সবাই মিলে বহুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে এসেছেন। শেষ পর্যন্ত যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃতি—তাদের কাছে এক ঐতিহাসিক অর্জন।

সরকার স্বীকৃতি দিলেও আনাস খান মনে করেন, এবার সময় এর বাস্তবায়নের। তিনি বলেন, ‘এটা এখন কেবল গেম খেলার ব্যাপার নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প ও পেশা হিসেবে গড়ে তোলার সময় এসেছে। যেহেতু এটি ক্রীড়া হিসেবে স্বীকৃত, তাই জাতীয় পর্যায়ে লিগ আয়োজন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্তি—সবই এখন সময়ের দাবি।’

তিনি জানিয়েছেন, সরকার চাইলে গিগাবাইট ও তার দল প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। ‘আমি নিজেও ২০ বছর ধরে এই জায়গায় আছি। সরকার যদি আমাদের ডাকে, আমরা অবশ্যই একসাথে কাজ করব,’ বলেন আনাস।

আনাস খান শুধু কর্পোরেট নেতৃত্ব নয়, একজন বাবা হিসেবেও গেমিংকে দেখেন ইতিবাচকভাবে। তার ভাষায়, ‘আমার ছেলেকে যদি আমি গেমিংয়ে প্রতিভাবান দেখি, কেন তাকে সুযোগ দেব না? তবে অবশ্যই পড়াশোনা বাদ দিয়ে নয়। একাডেমিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই এটা হতে হবে।’

বাংলাদেশে গিগাবাইট ব্র্যান্ডের উত্থানের পেছনে গেমারদের অবদানের কথা অকপটে স্বীকার করেন আনাস খান। ‘আমাদের মাদারবোর্ড, গ্রাফিক্স কার্ড, মনিটর—সবকিছু গেমারদের প্রয়োজন মাথায় রেখেই উন্নয়ন করেছি,” বলেন তিনি। গিগাবাইটের এআই-ভিত্তিক ল্যাপটপ ও গেমিং মনিটর এর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এই কমিউনিটিই আমাদের বড় শক্তি।’

ই-স্পোর্টস এখন আর শুধু কম্পিউটার গেম বা শখের কিছু নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইল গেম, হার্ডওয়্যার, আইএসপি ও নেটওয়ার্ক অবকাঠামো। আনাস খান মনে করেন, ‘টোটাল টেকনোলজি নিয়ে পরিকল্পনা করলেই এটা বাস্তবায়ন সম্ভব।’

- Advertisement -
বাংলাদেশে ই-স্পোর্টসের বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছোট নয়, আবার খুব বড়ও বলব না। এখন যেহেতু স্বীকৃতি এসেছে, একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হলে প্রকৃত পরিসংখ্যান বোঝা যাবে। তবে গেমার সংখ্যা মিলিয়নের কাছাকাছি।’

খাজা আনাস খানের চোখে এটি কোনো গন্তব্য নয়, বরং শুরু। তার ভাষায়, ‘এখন আর সময় স্বপ্ন দেখার নয়, বরং স্বপ্ন বাস্তবায়নের। আমরা সবার সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই। এটা দলবদ্ধ প্রচেষ্টার ব্যাপার। সবার সহযোগিতা পেলেই বাংলাদেশে ই-স্পোর্টস একদিন জাতীয় গর্ব হয়ে উঠবে।’

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *