চাপের মুখে নরম হলো সরকার, চাকরি আইন থেকে কঠোর ধারা বাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ৪ জুলাই, ২০২৫, ৩:০২
চাপের মুখে নরম হলো সরকার, চাকরি আইন থেকে কঠোর ধারা বাদ

ফাইল ছবি।

সরকারি চাকরিজীবীদের শৃঙ্খলার নামে সমালোচিত আইন সংশোধনে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৩২তম বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে চাকরি থেকে অপসারণ এবং অন্যকে কর্মবিরতিতে উসকানির মতো বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের বাধ্যতামূলক ধারা।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সচিবালয়ের আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-মহাসচিব মো. নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, প্রশাসনে ২০১৮ সালের শৃঙ্খলা বিধিমালা থাকায় নতুন অধ্যাদেশটি অপ্রয়োজনীয় ছিল। তবে কালো অধ্যাদেশ সংশোধনের জন্য সরকারের বোধোদয় ইতিবাচক।

সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা অন্যকে উসকানির অভিযোগে শাস্তি দেওয়ার আগে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, যার মধ্যে একজন নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক। অভিযোগের ৩ দিনের মধ্যে কমিটি গঠন এবং ১৪ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হলে তা কমিটির অদক্ষতা হিসেবে গণ্য হবে এবং তাদের এসিআরে তা লিপিবদ্ধ থাকবে।

অভিযুক্ত কর্মচারী চাইলে ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন এবং তা নোটিশে উল্লেখ করতে হবে। শাস্তির সিদ্ধান্ত হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করতে পারবেন।

এর আগে ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদ অধ্যাদেশটির খসড়া অনুমোদন দিলে ২৪ মে থেকে সচিবালয়ে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। ২৫ মে মধ্যরাতে সরকার তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করে, যেখানে শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্মবিরতি, উসকানি এবং বাধাদানের জন্য চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারণের বিধান রাখা হয়েছিল। এই আইনকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে শুরু হয় আন্দোলন। প্রায় এক মাসের আন্দোলনের পর সরকার তা সংশোধনে বাধ্য হয়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৪ জুন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠিত হয়। তারা আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধনের সুপারিশ দেয়, যা আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়। এতে আন্দোলনকারীদের আপত্তির অনেকটাই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।