দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ সহায়তা বন্ধের শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির মতে, এ ধরনের সহায়তা ব্যাংক খাতের স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং প্রকৃত সমস্যাগুলোকে ঢেকে রাখে, যা শেষ পর্যন্ত আরও বড় সংকটে রূপ নেয়।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একাধিক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সফররত আইএমএফ মিশন এ বিষয়ে কড়া অবস্থান জানায়। তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন, দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের অগ্রগতি, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ, এবং আগামী জানুয়ারি থেকে চালু হতে যাওয়া ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক-বেসড সুপারভিশন) প্রক্রিয়া নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করে।
বাংলাদেশকে দেওয়া ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই করতে আইএমএফের মিশন গত বুধবার ঢাকায় পৌঁছায়। প্রথম দিনেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। মিশনটি ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পর্যালোচনামূলক বৈঠক করবে।
সূত্র জানায়, সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিরা বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অর্থ জোগান দেওয়ার পুরোনো প্রথা বন্ধ করতে হবে। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে কয়েকটি ব্যাংক গভীর সংকটে পড়ে। তাদের টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ অর্থ দেওয়া হয়েছিল— এমনকি ছাপানো টাকাও ব্যবহার করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। আইএমএফ এটিকে অত্যন্ত বিরল ও ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে।
আইএমএফের পর্যবেক্ষণে, এই ধরনের সহায়তা ব্যাংকগুলোকে নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার প্রেরণা থেকে বঞ্চিত করে, ফলে তারা টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বৈঠকে জানান, বর্তমানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কোনো ব্যাংককে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ জোগান দেওয়া হচ্ছে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি কোনো অর্থ দিচ্ছে না।
আরও দুটি বৈঠকে আইএমএফ জানতে চায়, ভবিষ্যতে ব্যাংক খাতকে নতুন সংকট থেকে রক্ষা করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, তদারকি জোরদার এবং পুনঃমূলধনীকরণ পরিকল্পনা নিয়ে তাদের অগ্রগতি তুলে ধরে।
এদিকে, আইএমএফ আগেই জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ঋণের ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় দেওয়ার কথা থাকলেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরই কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

