প্রায় দুই দশক পর আবারও বসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন (জেইসি) বৈঠক। ২০০৫ সালের পর এ দুই দেশের মধ্যে আর কোনো উচ্চপর্যায়ের অর্থনৈতিক বৈঠক হয়নি। সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত নবম জেইসি বৈঠকে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে কৃষি, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, জ্বালানি, বিমান ও সমুদ্র যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানান, এই কমিশনের লক্ষ্য কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন নয়, বরং জনগণের কল্যাণ ও দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এই সভা শুধু সম্পর্ক উন্নয়ন নয়— জনগণের কল্যাণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি, বাণিজ্য, আইটি, খাদ্য ও অন্যান্য খাতে এমন সব প্রস্তাব আলোচনা হয়েছে যা সরাসরি দুই দেশের মানুষকে উপকৃত করবে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকেও নজর দিচ্ছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করলে পুরো অঞ্চলের উন্নয়ন অনেক দ্রুত এগিয়ে যাবে।’
বৈঠকে কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের বিষয়েও আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ যৌথ গবেষণা, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রযুক্তি সহায়তা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেয়। বিমান ও সমুদ্রপথে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সহজীকরণ নিয়েও প্রস্তাব আসে।
পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। তিনি বলেন, বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা সম্ভাবনার তুলনায় নগণ্য। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠী একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। তাই ট্রেড ভলিউম বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য, ওষুধ ও শিল্পপণ্য আমদানির পাশাপাশি কৃষি ও জ্বালানি খাতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, প্রায় দুই যুগ পর অনুষ্ঠিত এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংযোগও আরও শক্তিশালী হবে।
বৈঠকের শেষে উভয় দেশই পরস্পরের সহযোগিতা ও আতিথেয়তার প্রশংসা করে। পাকিস্তান জানায়, দীর্ঘ বিরতির পর এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বলা হয়, জেইসি কেবল দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং পুরো অঞ্চলের সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।
সব মিলিয়ে, প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত নবম জেইসি বৈঠককে বাংলাদেশ–পাকিস্তান সম্পর্কের এক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে— যেখানে মূল লক্ষ্য দুই দেশের জনগণের কল্যাণ ও দক্ষিণ এশিয়ার যৌথ উন্নয়ন।

