নামে বেনামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক সাব-রেজিস্টার শাহিন আলম

4 Min Read

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা :

 

দেশ জুড়ে নামে বেনামে অঢেল সম্পত্তি থাকার অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদপুরের সাব-রেজিস্টার শাহিন আলমের বিরুদ্ধে। কেলেঙ্কারিই যেন তার পুঁজি। ঘুষ, দুর্নীতি ও জমির সিন্ডিকেট করেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ার কারণে কোনোদিন প্রশাসনিক জবাদিহিতায় পরতে হয়নি তাকে। জমি সিন্ডিকেটের কারণে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষ এখন প্রশাসনের কাছে ঘুরছে বিচারের আশায়। অন্যদিকে সাব-রেজিস্টার শাহিন আলম আছেন বহাল তাবিয়তে করেছেন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

 

তার প্রভাবে নানাভাবে অপদস্থ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। বসিলার বাসিন্দা মমিনুল শেখ জানায় তাকে এক প্রকার জিম্মি করে অর্থ আদায় করেছিলেন এই শাহিন আলম। নূরজাহান রোডের পুরাতন জমি বিক্রি করে নতুন মালিককে দলিল দিতে গিয়ে একই বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এনায়েত হোসেনকে। তিনি বলেন, ‘কাজ নিয়ে গেলে প্রথমে তিনি খুব বিনয় দেখাবেন, নানা কাঠামোগত কথা বলবেন, সেবা দেওয়াই তাদের আসল কাজ, কাজ শুরুও হবে তবে মাঝ পথে গিয়ে আর কাজ আগাবে না।’

 

তারপর শাহিনের অফিসের সিন্ডিকেটের লোকজন ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বলবে, এমনকি অফিসের বাইরেও লোকজন নানা ইশারা ইঙ্গিত করবে। এমন তিন মাস ঘুরে শেষে টাকা দিয়ে কাজ শেষ করেন এনায়েত হোসেন।

 

মোহাম্মদপুরে সাব-রেজিস্টার শাহিন আলমের ঘুষ বাণিজ্য অফিস ও অফিসের বাইরে ছিল ওপেন সিক্রেট। এমনকি শাহিন আলমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সহকর্মীদের পক্ষ থেকে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

- Advertisement -

 

সাব-রেজিস্টার শাহিন আলমের দৃশ্যমান যে সব সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁকাইল এলাকায় তার একটি একতলা বাড়ি রয়েছে। এছাড়া, বাঁকাইলের পাশেই তিনি আরও ২০ শতকের একটি প্লট কিনেছেন, যার মূল্য এক কোটি টাকা।

 

- Advertisement -

তার এত সম্পদ কেনা নিয়েও আলফাডাঙ্গায়ও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সরকারি চাকুরি করে রাতারতি এত বিত্ত বৈভবের মালিক হওয়ায় স্থানীয়দের চায়ের আড্ডার গল্প হয়ে উঠেছেন শাহিন আলম ও তার পরিবার।

 

এছাড়া, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফিংগলিয়া মৌজায় প্রায় এক একর আয়তনের একটি মৎস্য ঘের কেনার তথ্য পাওয়া গেছে, যার ক্রয়মূল্য ৮০ লক্ষ টাকা। জমিটি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় হওয়ায় তিনি বেনামে এ সম্পদ কিনেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শাহিন আলমের একজন আত্নীয়।

 

জানা গেছে, ঢাকার কামরাঙ্গিরচরে চর কামরাঙ্গি মৌজায়, সাব-রেজিস্টার শাহিন আলম তার ভাইয়ের নামে ৪২৫ শতাংশ জমি কিনে সেখানে ছয়তলা ভবন তৈরি করেন। প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন প্রায় এক হাজার ৫৯০ বর্গফুট। দুর্নীতির দায় মুক্ত থাকতে, জমি ও ভবন তার ভাইয়ের নাবালক ছেলে-মেয়ের নামে হেবা মুলে রেজিস্ট্রেশন করে দিয়েছেন, যার দলিল নম্বর ৫৯৮২। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ জমির রেজিস্ট্রি খরচ হিসেবে মাত্র চার লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

 

প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে শাহিনের একাধিক সহকর্মী বলেন, শাহিন আলমের বিলাসী জীবনের গল্প নতুন করে বলার কিছু নেই। আয়কর বিবরণীতে তিনি মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২২৮ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি ২ লাখ ৩৫ হাজার ২২৮ টাকা ঋণ দেখিয়েছেন এবং ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন।

 

সূত্র বলছে কাগজ-পত্রের এ হিসেবে অসত্য তথ্যের, শাহিন আলমের ব্যাংকে নামে বেনামে বিভিন্ন এফডিআর এবং সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যা অর্ধশত কোটি টাকার বেশি হবে ।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহিন আলমের একজন সাবেক সহকর্মী বলেন, শাহিন আলম যখন ৩৮ হাজার টাকা মাসিক বেসিক বেতন পেতেন তখন মাসিক গাড়ি ভাড়া দিতেন ৪০ হাজার টাকা এবং সেই গাড়ির ড্রাইভারকে বেতন দিতেন ৩০ হাজার টাকা।

 

শাহিন আলমকে এসব কেলেঙ্কারি ও অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

 

 

 

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *