পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে: ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১৯ জুলাই, ২০২৫, ১০:৪৮
পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে: ফখরুল ইসলাম আলমগীর

গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো ফের সক্রিয় হয়ে জোট বাঁধছে বলে সতর্ক করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ভয়াবহ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, এটা আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনার সুযোগ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পরিস্থিতি আবার জটিল হয়ে উঠছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

মির্জা ফখরুল বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা জনগণের অগ্রযাত্রায় বা শোষণহীন সমাজ গঠনের রাজনীতিতে আস্থা রাখে না, তারা আবার জোট পাকাচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, যে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে আমরা বিতাড়িত করেছিলাম, তারা আবার ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে এবং ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তায় সংস্কার, জুলাই সনদ এবং নির্বাচন এই তিনটি বিষয় দ্রুত অগ্রসর করা। আমরা আশাবাদী, এই সরকারের যিনি নেতা, তিনি একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও বরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দেশে মব, হত্যা, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ হঠাৎ করেই বাড়ছে, যা আমাদের অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করে তুলছে। আমরা সুযোগ পেয়েছি, এই সুযোগ যদি হারিয়ে ফেলি তাহলে বাংলাদেশ আরও বহু বছর পিছিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রতিবার একটা করে অভ্যুত্থান হবে, আমাদের ছেলেরা প্রাণ দেবে, তারপর একটা সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু আমরা যদি দায়িত্বহীনভাবে সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলি, সেটা হতে দেওয়া যাবে না।

বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করেছি যে আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমাদের শক্তি যতটুকুই হোক, আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াই করেছি। এবারও আমরা পারব। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে একটি গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরুন। আমরা চাই সেই রূপরেখা নিয়ে একমত হয়ে জনগণের কাছে যাওয়া এবং নির্বাচন আয়োজন, যাতে আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়নের পথে যাওয়া যায়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রশ্নে কোনো আপস নেই বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ১৯৭১ আমাদের মূল কথা, এখান থেকে কোনো আপস নেই। গণতন্ত্র মানে আলোচনা, সহনশীলতা এবং মতের পার্থক্য মেনে নেওয়া। এসবের মাধ্যমেই একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমরা ফিরে যেতে পারব।

সংস্কার ইস্যুতে ফখরুল বলেন, সংস্কার তো আমরাই দিয়েছি। সরকারকে বলব, অযথা বিলম্ব না করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলুন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়াই একমাত্র পথ।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, গত এক বছরে দেশে দক্ষিণপন্থি রাজনীতির উত্থান ঘটেছে। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার সেই ধারাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। কেউ গাছের ফল খাচ্ছে আবার নিচেরটাও কুড়াচ্ছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশ কি রাষ্ট্র হিসেবে তার নাগরিকদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ওপর বৈষম্যহীন আচরণ করছে? আমরা অনেক আলোচনা করলেও সরকার এখনও সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মিটফোর্ড হাসপাতালে হত্যাকাণ্ড এবং গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনাগুলোতে ষড়যন্ত্রের আভাস রয়েছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন এই তিনটি ইস্যুই এখন রাজনৈতিক উত্তরণের কেন্দ্রবিন্দু। নির্বাচন ছাড়া সংস্কার হবে না, আর জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সফল হবে না। কাজেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো চেষ্টা মূলত সংস্কার ও বিচারকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক শেখ শহিদুল ইসলাম বাবলু এবং সঞ্চালনায় ছিলেন মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি’র তানিয়া রব, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণফোরামের এম মিজানুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির আখতার হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, বাংলাদেশ জাসদের নাজমুল হক প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নঈম জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন দলের নেতারা।