ইসরায়েলের সাবেক সামরিক প্রধান আইন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন। ফাঁস হওয়া ভিডিওতে দক্ষিণ ইসরায়েলের তেইমান সামরিক ঘাঁটিতে এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে ভয়াবহভাবে নির্যাতন করার চিত্র দেখা গেছে, জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
তোমের-ইয়েরুশালমি গত সপ্তাহে সামরিক অ্যাডভোকেট জেনারেল পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি ভিডিও ফাঁসের সম্পূর্ণ দায়ভার নিজের ওপর নিয়েছেন। পদত্যাগের দুই দিন পর রবিবার তাকে তেল আবিবের উত্তরে একটি সমুদ্রসৈকত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ আটক করে।
গত আগস্টে ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, সেনা রিজার্ভ সদস্যরা এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে আড়াল করে লাঠি ও ধারালো বস্তু দিয়ে নির্যাতন করছেন। পরে ওই বন্দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘটনার পর পাঁচ রিজার্ভ সেনাকে ‘গুরুতর শারীরিক নির্যাতন ও ক্ষতি সাধনের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রবিবার চারজন অভিযুক্ত মুখে কালো মুখোশ পরে জেরুজালেমে সুপ্রিম কোর্টের সামনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বিচার বাতিলের দাবি জানান।
পরবর্তীতে জানা গেছে, ওই বন্দিকে গত অক্টোবরে হামাসের সঙ্গে বন্দি বিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাজায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
ফৌজদারি তদন্ত শুরু হওয়ার পর তোমের-ইয়েরুশালমি ছুটিতে পাঠানো হয়। পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানান, তিনি আর দায়িত্বে ফিরতে পারবেন না। এরপরই তিনি পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগপত্রে তোমের-ইয়েরুশালমি লিখেছেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা মোকাবেলায় আমি সংবাদমাধ্যমে কিছু তথ্য প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলাম। বন্দিদের ওপর সহিংসতার সন্দেহ দেখা দিলে আমাদের তা তদন্ত করতেই হবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ তার পদক্ষেপকে ‘সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কলঙ্ক ছড়ানো’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। রবিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তেইমানের ঘটনা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে গুরুতর প্রচারণাগত আঘাত।
এই ঘটনা ইসরায়েলি সমাজে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করেছে। ডানপন্থিরা ভিডিও ফাঁসকে সেনাবাহিনীর মানহানি ও প্রায় দেশদ্রোহিতার সমান মনে করছেন। অন্যদিকে বামপন্থিরা বলছেন, তোমের-ইয়েরুশালমি অন্তত একবার দায়িত্বশীলভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হাজার হাজার নারী, শিশু ও পুরুষ পরিকল্পিত নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, যা যুদ্ধাপরাধের অন্তর্ভুক্ত।
ইসরায়েল সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, দেশটি আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে এবং প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে।

