ফুটবল উন্মাদনা, ফিরে এল ৮০-৯০ দশক

ক্রীড়া প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১০ জুন, ২০২৫, ১২:১৬
ফুটবল উন্মাদনা, ফিরে এল ৮০-৯০ দশক

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সন্ধ্যা ৭টায় ম্যাচ শুরু হলেও, দুপুর গড়ানোর আগেই ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামমুখী হতে শুরু করে হাজারো ফুটবলপ্রেমী। ম্যাচের অন্তত ৫-৬ ঘণ্টা আগেই ভক্তদের বিশাল ঢল স্টেডিয়ামের চারপাশে জমে ওঠে।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) আগেই ঘোষণা দিয়েছিল দুপুর ২টায় স্টেডিয়ামের গেট খুলবে। কিন্তু তার বহু আগেই স্টেডিয়াম ঘিরে জমে যায় বিশাল ভিড়। ভক্তরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রবেশের অপেক্ষায়। গেট খুলতেই হাজারো মানুষ ঢুকে পড়েন গ্যালারিতে, এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই গ্যালারির অর্ধেক আসন পূর্ণ হয়ে যায়। প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও তারা বসে থাকেন প্রিয় দলের খেলার অপেক্ষায়। বিকাল ৪টার দিকে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে যারা বাইরে লাইনে ছিলেন, তারা ভিজে একসার হয়ে যান।

গ্যালারির ভেতর ও বাইরে ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে ছিল দারুণ উত্তেজনা। কেউ হাতে বাংলাদেশের পতাকা, কেউ বা মাথায় বাঁধা পতাকা নিয়ে এসেছেন প্রিয় দলকে সমর্থন জানাতে। ভক্তদের মধ্যে কয়েকজনের উদ্ভাবনী শক্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো। হামজা, শমিত ও ফাহামিদুলকে নিয়ে লেখা কবিতা—‘হামজা-শামিত-ফাহামিদুল, গোল দিতে করিও না ভুল’—অনেকে হাতে নিয়ে এসেছেন। আবার একজন তরুণ ভক্ত চুল কেটেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা নতুন বাংলাদেশি তারকা হামজা চৌধুরীর স্টাইল নকল করে। দর্শকদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড ‘হামজা-শমিত-ফাহামিদুলের ঠিকানা: পদ্মা মেঘনা যমুনা’।

বিকেল ৫টার পর নিরাপত্তার স্বার্থে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। যারা আগেভাগে পৌঁছেছিলেন, তারাই নিশ্চিত করতে পারেন গ্যালারিতে বসার স্থান।

এই উন্মাদনা অনেককে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে ৮০-৯০-এর দশকে, যখন আবাহনী-মোহামেডানের দ্বৈরথে উপচে পড়ত স্টেডিয়াম। এমন পরিবেশ শেষ দেখা গিয়েছিল ২০০৩ সালে, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়ের সময়।

এবারের আলাদা আকর্ষণ হলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। তার পাশাপাশি শামিত সোম ও ফাহামিদুল ইসলামের জাতীয় দলের জার্সিতে উপস্থিতি তরুণ প্রজন্মের মাঝে ফুটবল প্রেম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে নামছেন এমন তারকাদের মাঠে দেখতে চায় সবাই।

ম্যাচের টিকিটের জন্য দেশজুড়ে ছিল বিশাল চাহিদা। বাফুফে মোট ১৮,৩০০ টিকিট ছাড়ে, যা কয়েক মিনিটেই ‘সোল্ড আউট’ হয়ে যায়। ওয়েবসাইটে প্রচণ্ড চাপ ও সাইবার হামলার কারণে অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট পাননি।

তবে যারা স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারেননি, তাদের জন্যও ছিল বিকল্প ব্যবস্থা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর, চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম, রংপুর জেলা পরিষদ চত্বর, সিলেটের জিরো পয়েন্টসহ রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশালের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খেলা দেখানো হচ্ছে।

২০২৭ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়ান কাপের ১৯তম আসর। সেখানে খেলবে ২৪টি দল, আর বাংলাদেশও সেই তালিকায় জায়গা করে নিতে চায়। তাই এই বাছাইপর্বের প্রতিটি ম্যাচ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ম্যাচ দিয়ে সেই স্বপ্নের যাত্রা শুরু করতে চায় হামজা-শমিত-ফাহামিদুলরা দেশজুড়ে কোটি ভক্তের একটাই প্রার্থনা, জয় দিয়ে যাত্রা শুরু হোক।