প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকের ক্ষতি নতুন কিছু নয়। তবে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। বৃষ্টির পানি জমে থাকলে দ্রুত নিষ্কাশন, রোগ প্রতিরোধ ও সঠিক পরিচর্যা করলে নুয়ে পড়া ধানগাছও পুনরায় দাঁড়িয়ে ভালো ফলন দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন কৃষকদের সচেতনতা, সরকারি সহায়তা এবং স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ।
সম্প্রতি টানা দুই দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, সারিয়াকান্দি, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জসহ প্রায় সব উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও মাঝারি উঁচু জমিতে পানি জমে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ধান চাষিরা। বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা আর্দ্রতা ও বাতাসের প্রভাবে অনেক জায়গায় কাঁচা ধানের গাছ নুয়ে পড়েছে। আর মাটিতে নুয়ে পড়া ধান পানিতে ডুবে থাকায় ধান পরিপূর্ণ পুষ্ঠ না হওয়া ও ধানের কালো কালো দাগ পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে। তাছাড়া কুশি ভরা ধানের ফুল ঝড়ো বাতাসে পড়ে যাওয়ায় পরাগায়ন না হলে চিটা হয়ে যেতে পারে। অসময়ে ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা।
ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী, মথুরাপুর ইউনিয়নসহ আশেপাশের বিষ্ণুপুর, পাচথুপি, নছরতপুর, পীরহাটি, খাদুলীসহ অনেক গ্রামেই এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অসংখ্য কৃষক। কৃষক শাহজাহান আলী, সিরাজুল ইসলাম, ফেরদৌস আলম, ফজলুল হক, গোলবার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আলামীন, মোতালেব হোসেন, আলী আকবর, বেলাল হোসেন, বাবলু সেখ, আব্দুর রশিদ ও হবিবর রহমানসহ অনেকে ধানক্ষেতের এমন বিপর্যয় সম্পর্কে বলেন, গাছ যদি পুরোপুরি সোজা অবস্থায় ফিরিয়ে আনা না যায়, ফলন কমে যাওয়ার পাশাপাশি যেমন বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তেমনি সার বীজ ও শ্রমের বিনিয়োগ ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কায় উপজেলার ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের চোখে-মুখে নেমে এসেছে হতাশার ছাপ।
অসময়ে এমন বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় হতাশ হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। বগুড়ায় আগাম জাতের আমন ধান রোপন করা করা হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টের জমিতে। আগাম জাতের আমন মধ্যে আমির ব্রী ৭৫, বিনা -১৭, ব্রী ধান ৪৯ ধান অন্যতম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অদিধপ্তরের উপ-পরিচালক শামস উদ্দিনফিরোজ জানান, এ বছর বগুড়ায় ১ লাখ ৮৩ হেক্টর ৫০০ হেক্টর জামিতে আমন চাষ হয়েছে। এবারে বগুড়ায় আমন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে চাল আকারে, ৬ লাখ ৬১ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন। গত বছর আমন উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৬১(চাল আকারে) মেট্রিকটন। তবে বৃষ্টি ও ঝড়ো আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

