সাউন্ড গ্রেনেড মানবদেহে যে সকল প্রতিক্রিয়া তৈরি করে

3 Min Read
পরিত্যক্ত অবস্থায় সাউন্ড গ্রেনেড, ফাইল ছবি।

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা :

আন্দোলন কিংবা বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে বিগত সরকার ও বর্তমান সরকারের সময়ে পুলিশের অন্যতম হাতিয়ার সাউন্ড গ্রেনেড। প্রকৃতপক্ষে সাউন্ড গ্রেনেড উচ্চ বিক্রিয়াশীল সক্রিয় রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রনে তৈরীকৃত একটি পটকা বা আতশবাজি; যা একইসাথে বিক্রিয়াতে শব্দ ও আলো উৎপন্ন করে। এ অস্ত্র মূলত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষায়িত এ গ্রেনেড থেকে একই সঙ্গে ধোঁয়া, বিকট শব্দ এবং উজ্জ্বল আলোর ঝলকানির সৃষ্টি হয়ে থাকে, যা মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হলে এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের মিশ্রণ থেকে ১৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ এবং ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন ক্যান্ডেলা আলো উৎপন্ন হয়।

আতঙ্ক তৈরির সাউন্ড গ্রেনেড মানুষকে রক্তাক্ত না করলেও নানা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়ায় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

২০২৩ সালে পুলিশের আর্মস ও অ্যামুনেশনের একটি দরপত্র থেকে জানা যায়, ৩০ হাজার সাউন্ড গ্রেনেডের দাম ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৯০০ ডলার বা ১৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে)।

২০২৩ সালের ১১ মে পুলিশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পৃথক চারটি অনাপত্তিপত্র দেয়। এর একটিতে ১ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় ১০ হাজার কালার স্মোক গ্রেনেড কেনার কথা জানানো হয়।

আরেকটি অনাপত্তিপত্রে ৫ কোটি ১৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় ২০ শতাংশ ভেরিয়েশনের ২৮ হাজার ৫০০ সাউন্ড গ্রেনেড কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্য দুটি অনাপত্তিপত্রে ১ লাখ ৯৬ হাজার কাঁদানে গ্যাসের শেল কেনার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

২০১২ সালে চীন থেকে দশ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তারপর ২০১৬ সালে ব্রাজিল থেকে আরও ১০ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড আমদানি করে পুলিশ।

- Advertisement -

সূত্র মতে, ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রথম সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা আন্দোলন দমনে ব্যাপক ভুমিকা  রাখে। হেফাজতের বিশাল সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার পর সাউন্ড গ্রেনেডের প্রতি পুলিশের আস্থা বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সাউন্ড গ্রেনেডের প্রভাব সাধারণত অস্থায়ী হয়। শব্দ এবং আলো আক্রান্তে ব্যক্তির চোখ ও কানে অস্থায়ীভাবে ক্ষতি করে, ফলে শত্রু কিছুক্ষণের জন্য দৃষ্টিহীন ও বধির হয়ে পড়ে। তবে এর ব্যবহার কখনো কখনো স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে, যদি আক্রান্ত ব্যক্তির খুব কাছে সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেবেশ রায় বলেন, মানুষের শ্রবণশক্তির একটা সীমা আছে।  উচ্চশব্দে হর্ন বাজাতেও আমরা নিষেধ করি। বিকট শব্দের কারণে ব্রণের নার্ভগুলো নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে। সবসময় মাথার মধ্যে শোঁ শোঁ আওয়াজ হতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষ মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, সাউন্ড গ্রেনেড নয়, সব ক্ষেত্রেই শব্দের একটা মাত্রা থাকা উচিত।

- Advertisement -
newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *