১৪ শ’ প্রাণের বিনিময়ে তৈরি হয়েছে রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুযোগ: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবারের মতো দেশের সকল রাজনৈতিক শক্তিকে নিয়ে একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ এসেছে কমপক্ষে ১৪ শতাধিক মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে—যাদের রক্তের ঋণ থেকেই গড়ে উঠতে হবে একটি সত্যিকারের জনগণের রাষ্ট্র।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন অধ্যাপক রীয়াজ, তিনি বলেন
যাদের প্রাণের বিনিময়ে এই সুযোগ এসেছে, তাদের কাছে আমাদের দায় আছে। এই দায় ও অঙ্গীকার থেকেই যেন রাষ্ট্র বিনির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি
গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকবে, লক্ষ্য হতে হবে অভিন্ন
বক্তব্যে তিনি রাজনৈতিক মতভেদের বাস্তবতাকে স্বীকার করে বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে ভাষা ও মতের ভিন্নতা থাকলেও একটি অভিন্ন লক্ষ্য থাকা উচিত—এবং সেটি হতে হবে একটি জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ চুক্তি।
আমরা সবার ভাষা এক না হলেও লক্ষ্য এক। গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্যের ওপর নির্ভর করছে আমাদের সাফল্য — বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, মীর মোফাজ্জল হোসেন মুশতাক, মাহমুদ হোসেনসহ আরও কয়েকজন।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত
প্রসঙ্গত, সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোকে সামনে রেখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামতের জন্য বিস্তারিত সুপারিশ স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে। এরই মধ্যে ৩৫টি দলের মতামত কমিশনের হাতে এসেছে, আর ২১টি দল সরাসরি সংলাপে অংশ নিয়েছে।
এই প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিরল মুহূর্ত—যেখানে ক্ষমতা, আদর্শ ও অবস্থানগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটি মৌলিক জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক ঐক্য না এলে ব্যর্থ হবে সংস্কার প্রক্রিয়া
বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে যেকোনো সংস্কার কর্মসূচি বা জাতীয় সংলাপ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এইবারও যদি তা হয়, তাহলে আত্মত্যাগের ইতিহাস শুধু স্মরণেই সীমাবদ্ধ থাকবে—বাস্তবে নয়।
অধ্যাপক রীয়াজের মন্তব্য সেই আশঙ্কা থেকেই জন্ম নেওয়া, যেখানে তিনি সকল পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন, আত্মত্যাগ ও ঐক্যের আবেগকে পরিণত করতে হবে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতায়।
আপনার মতামত লিখুন