অস্বাভাবিক লেনদেন ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যবস্থা নয়, সহানুভূতি পেয়েছেন ইকবাল পারভেজ

বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫, ৩:৪৬
অস্বাভাবিক লেনদেন ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যবস্থা নয়, সহানুভূতি পেয়েছেন ইকবাল পারভেজ

ইকবাল পারভেজ চৌধুরী ও আইএফআইসি ব্যাংকের লোগো।

বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের। এবার ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ইকবাল পারভেজ চৌধুরী নতুন করে আলোচনায় এসেছেন কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণের অভিযোগে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সম্প্রতি চট্টগ্রামের চকবাজারে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি হিসাবে ‘ইকবাল ট্রেডার্স’-এর নামে প্রায় ৯ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন চিহ্নিত করেছে। উল্লেখ্য, ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ইকবাল পারভেজ চৌধুরীরই বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

অস্বাভাবিক এ লেনদেনের জন্য আইএফআইসি ব্যাংকের সার্ভিস রুলের ৯ ও ১০ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও এখনও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা বিএফআইইউকে অনুরোধ করেছেন বিষয়টি ‘সহানুভূতির সঙ্গে’ বিবেচনার জন্য।

এদিকে, ইকবাল পারভেজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া প্রতিষ্ঠান এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, গ্লোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল এবং স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল এই চার প্রতিষ্ঠানের নামে ২,৩৭৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন, প্রস্তাব, সুপারিশ ও বিতরণের ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততা উঠে আসে। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে।

বিএফআইইউ-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, ৯ কোটি টাকার লেনদেন-সংক্রান্ত প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রতিবেদন একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।

আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ইকবাল পারভেজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক লেনদেন ও চাকরি নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান মুঠোফোনে বলেন, বিএফআইইউ একটি স্বতন্ত্র ইউনিট, তাদের তদন্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো বক্তব্য দেয় না।

চাকরির নীতিমালার ব্যত্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার কেবল ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ পর্যন্ত। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে তা জানানো হয়। ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা জানিয়ে আমাদের অবহিত করে।

ইকবাল পারভেজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কেন এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ হোসেন খান বলেন, বিএফআইইউ’র তদন্ত যেহেতু এখনও চলমান, তাই ব্যবস্থা নেওয়ার সময় ফুরিয়ে যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তকারী কর্মকর্তা ইকবাল পারভেজ চৌধুরীর অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

‘ইকবাল ট্রেডার্স’-এর মালিক আপনি কি না, এমন সরাসরি প্রশ্নের জবাবে স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল পারভেজ চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘নামের একটা ইয়ের কারণে ওরা একটা ইয়ে করেছে।’ এরপর উল্টো প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা তো কনফিডেন্সিয়াল বিষয়, আপনারা কেন এটা জানতে চাচ্ছেন?

তাঁর দাবি, এটা কোনো ইস্যু না। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাখ্যা চেয়েছিল, আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। প্রায় ৯ কোটি টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা দেননি আইএফআইসি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল পারভেজ চৌধুরী।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফাকে এ বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে ফোন করে ও বার্তা পাঠিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।