আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল, জামায়াত নেতা আজহার খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ৫:০৮
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিল, জামায়াত নেতা আজহার খালাস

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

এর আগে ৮ মে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন। সর্বোচ্চ আদালত তার রায়ে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় এবং পরে আপিল বিভাগের দেওয়া সেই দণ্ড বহাল রেখে দেওয়া রায়ও বাতিল ঘোষণা করেন। অন্য কোনো মামলা না থাকলে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।

আসামিপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলেন গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। ৬ মে থেকে শুরু হওয়া শুনানি চলে একাধিক দিন।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম, মোবারক হোসাইন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ আরও অনেকে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন, গুরুতর জখম, বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মোট ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে দুই, তিন ও চার নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচ ও ছয় নম্বর অভিযোগে যথাক্রমে ২৫ বছর ও ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।

পরবর্তী সময়ে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দুই, তিন, চার ও ছয় নম্বর অভিযোগের সাজা বহাল থাকলেও পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

ওইদিন আসামিপক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম — যাঁরা উভয়েই বর্তমানে প্রয়াত। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।

২০২০ সালের ১৯ জুলাই দাখিল করা এই রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়, যা ছিল ২৩ পৃষ্ঠাব্যাপী। ওই আবেদনের শুনানি শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ পুনরায় আপিলের অনুমতি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এই চূড়ান্ত আপিলের শুনানি হয় এবং আজহারুল ইসলাম খালাস পান।