কক্সবাজার কারা হাসপাতালে বেড বাণিজ্য: নেপথ্যে জেলার ও জেল সুপার

কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে একরকম “আর্থিক চুক্তির” মাধ্যমে চলছে বেড বাণিজ্য, আর তা পরিচালিত হচ্ছে কারা হাসপাতালকেন্দ্রিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। অভিযোগ উঠেছে, সুস্থ বন্দিদের অসুস্থ সাজিয়ে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে রাখা হচ্ছে হাসপাতালের বেডে। এই অর্থ ভাগবাটোয়ারা হয় কারা কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের মধ্যে।
কারা হাসপাতালে টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে সহকারী কর্মচারী মিজানুর রহমান। বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি সরাসরি টাকা দাবি করেন। গত ২ মে (শুক্রবার) বিকালে কারাগারে থাকা এক হাজতির স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে মিজান বলেন, ‘আপনার লোক আমার কাছে রয়েছে, যত তাড়াতাড়ি পারেন ১৫ হাজার টাকা পাঠান। না পারলে বেড থেকে বের করে দেওয়া হবে।’
মিজান আরও বলেন, আমি যে টাকার কথা বলেছি কাউকে বলবেন না। অন্যদের থেকে ১৫ হাজারের বেশি নিই, আপনার লোকের দিকে তাকিয়ে ১০ হাজার বলেছি।
এই কথোপকথনের অডিও রেকর্ড এবং পরদিন অর্থাৎ ৩ মে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কারা হাসপাতালের সহকারী মিজানুর রহমান একজন বন্দির স্বজনদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। টাকা নেওয়ার সময় তিনি বলেন, কোনো সমস্যা হবেনা, ২৪ ঘণ্টা খোঁজখবর পাবেন, হাসপাতালে আমার সাথেই থাকে।
বন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ, কারাগারে প্রবেশের প্রথম দিন তাদের রাখা হয় ‘আমদানি ওয়ার্ডে’। এরপর অর্থের বিনিময়ে হাসপাতাল কিংবা ভালো ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পেতে হয় ‘বখশিশ’—৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা বা এক প্যাকেট বিদেশি সিগারেট পর্যন্ত দিতে হয়। এসব আদায়ে যুক্ত রয়েছেন ডেপুটি জেলার সুবহান।
সব অনিয়মের পেছনে কারা হাসপাতাল ও ওয়ার্ড বণ্টনের মূল সিদ্ধান্ত আসে জেলার আবু মুছার দিক থেকে। এ বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, টাকা আমাদের খেতে হয়, তবে জেল সুপারের বাইরে কিছু হয় না।
তবে পুরো ঘটনায় কারা অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে কি না, সেই বিষয়ে জেল সুপার জাবেদ মেহেদীর বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন