কক্সবাজার লিংকরোড চেকপোস্ট দিয়েই চলছে অবাধে কাঠ, মাটি ও বালি পাচার

বিশেষ সংবাদদাতা:
প্রকাশ: ১২ মে, ২০২৫, ২:৪৭
কক্সবাজার লিংকরোড চেকপোস্ট দিয়েই চলছে অবাধে কাঠ, মাটি ও বালি পাচার

কক্সবাজার লিংকরোড চেকপোস্ট এখন অবৈধ কাঠ, চিরাই কাঠ, বালি ও মাটি পাচারের অন্যতম রুটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই চেকপোস্ট অতিক্রম করে পাচার হচ্ছে কোটি টাকার গাছ ও কাঠ। বনবিভাগের নীরব ভূমিকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে লিংকরোড বিট কাম চেকস্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভনের বিরুদ্ধে পাচার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারিতেই এসব অনিয়ম হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জের আওতাধীন লিংকরোড বিট চেকপোস্টে রাতভর কাঠবাহী ট্রাক ও পিকআপ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করে। নিয়মিত চলছে চাঁদা আদায়। কাঠ পাচারে দৈনিক লেনদেন হয় ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকারও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, পারমিশন থাকা সত্ত্বেও গাড়িপিছু নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা না দিলে কাঠবাহী ট্রাকগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে দর কষাকষি করে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ টাকা আদায় করে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উখিয়া, ধোয়াপালং, খুনিয়াপালং, রাজারকুলসহ বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে চোরাই কাঠ এনে শহরের বাংলাবাজার, খুরুলিয়া ও আশপাশের এলাকায় সরবরাহ করা হয়। ট্রান্সপোর্ট পারমিশন বা টিপি থাকা কাঠের বাইরেও অতিরিক্ত কাঠ পাচার হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর চাঁদার অঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে যায়। টেকনাফ বন্দর থেকে আসা গাছ ভর্তি প্রতি ট্রাকে ২০০০ টাকা, চিরাই কাঠে ৩০০০ টাকা, বাঁশবাহী ট্রাকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। এই টাকা আদায়ের কোনো সরকারি অনুমতি না থাকলেও তা প্রতিদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে।

এখনো মাঝে মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ ও উত্তর বনবিভাগ অভিযান চালিয়ে কাঠসহ গাড়ি আটক করলেও অধিকাংশ সময়ই তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে এসব অভিযান কার্যত লোকদেখানো এবং নাটকীয়তায় পর্যবসিত হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বছরের পর বছর ধরে এই অবৈধ পাচার চলতে থাকায় কক্সবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো দিনদিন বিরাণভূমিতে পরিণত হচ্ছে। বন উজাড়ের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে এবং সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বনবিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান শোভন বলেন, “আমরা পাচার রোধে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া অর্থ আদায়ের এখতিয়ার আমাদের নেই।” তার এই বক্তব্য মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করেছে স্থানীয় পরিবেশবাদীরা ও ব্যবসায়ীরা।