খালেদা জিয়ার ফেরা, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশের নব যাত্রা

মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ৬ মে, ২০২৫, ৪:৫৪
খালেদা জিয়ার ফেরা, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পথে বাংলাদেশের নব যাত্রা

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। - ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে খালেদা জিয়া একটি অবিচ্ছেদ্য নাম। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি শুধু একজন রাজনীতিকই নন, বরং বহুমাত্রিক রাজনৈতিক চেতনা ও সংগ্রামের প্রতীক। তার দেশের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন অনেকের কাছেই এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই ফিরে আসা শুধুমাত্র একজন নেতার প্রত্যাবর্তন নয়, এটি একটি যুগের প্রতিধ্বনি এবং গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণের প্রত্যাশা।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দেশের রাজনীতিতে যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছিল, তা আজ স্পষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি সন্ধিক্ষণে আমরা দাঁড়িয়ে।

দীর্ঘ একচেটিয়া শাসন, দমন-পীড়ন ও কর্তৃত্ববাদী নীতির ছত্রছায়ায় জনগণের মৌলিক অধিকার যখন প্রায় স্তব্ধ, ঠিক সেই সময় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের রাজপথ।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে এককেন্দ্রিক রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সংকোচ এবং বিরোধী মতকে দমন করার প্রবণতা—সব মিলিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছিল সীমাবদ্ধ। তার ফিরে আসা এসব রাজনৈতিক অসমতা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী প্রতিবাদ হয়ে উঠেছে।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি অপরিহার্য। খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বিরোধী দলের শক্তিশালী অবস্থান সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে বাধ্য করে, যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি।

তবে এই নবযাত্রা রয়েছে নানা প্রশ্ন, বিভাজন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে আধুনিক, সহনশীল এবং জনগণের প্রত্যাশাপূর্ণ রাজনৈতিক দল হয়ে উঠতে হবে যদিও তাদের সামনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সংস্কার, তরুণ নেতৃত্বের উত্থান নিশ্চিতকরণ এবং গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আধুনিক গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয়; এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার রক্ষা এবং কার্যকর সংসদীয় সংস্কৃতির অনুশীলন। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা এসব মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, তার প্রত্যাবর্তন নতুন করে গণতন্ত্রের আলোচনায় প্রাণ ফিরিয়েছে। একটি সহনশীল, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং দায়বদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনে সব রাজনৈতিক পক্ষের আন্তরিকতা প্রয়োজন।

সার্বিকভাবে, খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা যেন এক প্রতীকী সংকেত যেখানে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আবারও দিশা খুঁজছে। এটি যদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন সংলাপ, সমঝোতা এবং সংস্কারের সূচনা ঘটাতে পারে, তবে এ হবে শুধু একটি ব্যক্তির ফিরে আসা নয়, এ হবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার এক নতুন অধ্যায়।