খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম সয়েল আর্কাইভ: কৃষি-গবেষণায় নতুন দিগন্ত

শ্রাবণী আফরিন হীরা, খুবি :
প্রকাশ: ১৬ মে, ২০২৫, ৪:০৪
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম সয়েল আর্কাইভ: কৃষি-গবেষণায় নতুন দিগন্ত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের ছাত্র আবদুল্লাহ আল নোমান যখন ২.১ টার্মে গবেষণার জন্য মাঠে গিয়ে মাটির নমুনা সংগ্রহ করছিলেন, তখন তার মনে প্রশ্ন জাগে—দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির গুণমান জানতে এত সময় ও পরিশ্রম লাগে কেন? এখন আর সেই প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়ায় না। কারণ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম ‘সয়েল আর্কাইভ’, যেখানে হাজার হাজার মাটির নমুনা সংরক্ষিত এবং বিশ্লেষণাধীন রয়েছে।

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে চালু হওয়া এই আর্কাইভটি স্থাপন করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের ভূগর্ভস্থ দুই তলায়। এখানে ইতোমধ্যে দেশের ১,৭৫৫টি ভিন্ন অঞ্চলের ৬,৫০০টির বেশি মাটির নমুনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা, উপকূল, সুন্দরবন ও সমতল গ্রামাঞ্চলের মাটি। এই আর্কাইভ থেকে জানা যাবে মাটির উর্বরতা, পুষ্টি উপাদান এবং নির্দিষ্ট ফসলের জন্য উপযোগিতা। কৃষক, গবেষক, বন কর্মকর্তা, কৃষিবিদসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখান থেকে সহজেই তথ্য পেতে পারবেন—কোন জমিতে কোন ফসল বা গাছ লাগানো উপযোগী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “এই আর্কাইভ দেশের কৃষি ও বন ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। আমরা একে গবেষণা ও শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।”

মাটি, পানি ও পরিবেশ ডিসিপ্লিনের প্রধান মো. সানাউল ইসলাম জানান, এখন আর চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্ট থেকে নমুনা বিশ্লেষণের জন্য মাঠে যেতে হয় না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভেই এসব তথ্য সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি নমুনা দুই স্তর থেকে সংগৃহীত—উপরের ১৫ সেন্টিমিটার এবং নিচের ১৬ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার গভীরতা পর্যন্ত। প্রতিটি নমুনার সঙ্গে জমির পরিবেশ, অবস্থান ও অন্যান্য তথ্যও সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে মাটি ব্যবস্থাপনায় টেকসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়।

২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “এই আর্কাইভ থেকে সরাসরি তথ্য পাওয়ায় আমাদের গবেষণা অনেক সহজ ও কার্যকর হয়েছে।”

সয়েল আর্কাইভটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা USAID। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ দেশের কৃষি, বন এবং পরিবেশ গবেষণায় তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।