গণপূর্তের টেন্ডার বাণিজ্যের নতুন চক্রে প্রকৌশলী ময়নুল হক

জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরে শুরু হয় ব্যাপক রদবদল। এই রদবদলের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. ময়নুল হককে চট্টগ্রাম গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-১ থেকে বদলি করা হয় ঢাকা ই/এম বিভাগ-৩ এ। কিন্তু ঢাকায় বদলি হয়ে এসেই তিনি জড়িয়ে পড়েছেন নতুন করে টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এক নির্দেশনার মাধ্যমে বার্ষিক প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান (এপিপি) সংশ্লিষ্ট বরাদ্দের কাজ লিমিটেড টেন্ডার মেথড (LTM) পদ্ধতিতে আহ্বানের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ অধিদপ্তরের সব বিভাগে প্রযোজ্য হলেও এস. এম. ময়নুল হক তা উপেক্ষা করে অধিকাংশ দরপত্র আহ্বান করেছেন ওপেন টেন্ডার মেথড (OTM) পদ্ধতিতে।
সূত্র জানায়, LTM পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করলে কাজের বরাদ্দ লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু OTM পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতার নামে কমিশনের বিনিময়ে ময়নুল হক তার পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিয়ে থাকেন। কমিশনের পরিমাণ ঠিক হলে দরপত্রের জন্য নির্দিষ্ট রেট-কোটেশনও ঠিকাদারকে দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম দরে কাজ পেয়ে যান।
এস. এম. ময়নুল হকের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিতে ৩০টি দরপত্রে টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। নিউজনেক্সটের হাতে আসা দরপত্র আইডিগুলো হলো: ১১১৫৩৪৮, ১১১৩৬২৭, ১১১৩৬৮১, ১১১৩৬৮৪, ১১১৩৬৮৩, ১১১৩২১৬, ১১১৩২২৬, ১১১৩২৫৩, ১১১৩২৮১, ১১১৩৪৭৮, ১১১৩২৮১, ১১১৩৮৩৭, ১১১২১৫১, ১১০৫৭৪০, ১১০২৩৯৩, ১১০২৪৩৯, ১১০৩৩৪৯, ১১০২৩৫৮, ১১০২৩৫১, ১০৯৭৩৮৭, ১০৯৫২০১, ১০৯৪৭৫৭, ১০৯৪৭২৪, ১০৯৩৯৬৩, ১০৮২২৮৩, ১০৮৬৭৯৫, ১০৮৬৯২৯, ১০৮১০৪৭, ১০৮০৬৬৩, ১০৭৫৭৯০।
ঢাকা ই/এম বিভাগ-৩ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এই ত্রিশটি টেন্ডার থেকে ময়নুল হক অন্তত ১.৫ থেকে ২ কোটি টাকার মতো কমিশন নিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, “যেভাবে তিনি কাজের বিনিময়ে কমিশন নিচ্ছেন, আগামী বাজেটে নতুন বরাদ্দ এলে সেই পরিমাণ আরও বাড়বে।”
বঞ্চিত ঠিকাদাররা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তারা আশা করেছিলেন, সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবার তারা কিছু কাজ পাবেন। কিন্তু ময়নুল হক ঢাকায় এসেই যেভাবে OTM পদ্ধতিতে কাজ দিচ্ছেন, তাতে আবারও পেছনে পড়ে যাচ্ছেন তারা। এক ঠিকাদার বলেন, “আমরা এত কমিশন দিয়ে কাজ নিতে পারি না। ফলে কোনো সুযোগই থাকছে না।”
এই বিষয়ে এস. এম. ময়নুল হকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার দপ্তরে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে রদবদলের পর দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরির যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, এস. এম. ময়নুল হকের কর্মকাণ্ড সেই প্রত্যাশাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের মতো করে টেন্ডার আহ্বান ও কাজ বরাদ্দ করার অভিযোগ প্রশাসনিক জবাবদিহিতার ঘাটতিও স্পষ্ট করে তুলছে। এই অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত না হলে গণপূর্তের সংস্কার উদ্যোগই হবে প্রশ্নবিদ্ধ।
আপনার মতামত লিখুন