গরমে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:৩৯
গরমে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় থাকবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান/ নিউজনেক্সট

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের লোডশেডিং পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব না হলেও তা সহনীয় মাত্রায় রাখা হবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে লোডশেডিংয়ে কোনো বৈষম্য থাকবে না বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত “জ্বালানি সংকট ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকলেই সবাই লোডশেডিং মনে করে। অনেক সময় লাইনের ত্রুটির কারণেও সমস্যা হয়। যেকোনো সময় বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র অকেজো হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে গরমকালে। এসব মাথায় রেখেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, ২৪ এপ্রিল দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যেখানে ১৭৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাতে বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আমদানির চেষ্টা চলছে।

খরচ কমানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমিয়ে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখা হবে।” একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করেন, “ক্রাইসিস শব্দের ব্যবহার যতটা সম্ভব সংযত করা উচিত, কারণ সংকট অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং ছোট সমস্যা বড় হতে পারে।”

অর্থনীতির অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতি নিম্নমুখী ছিল, এখন আর নেই। এরিয়ার পেমেন্টের কারণে ভর্তুকি বেড়েছে। অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট করে বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। আগামী বছর কোনো বকেয়া থাকবে না, ফলে ভর্তুকিও কমবে।”

বিদ্যুৎখাতের ট্যারিফ নিয়েও তিনি কথা বলেন। তার ভাষায়, “বিদ্যুৎখাতে কিছু শোষণমূলক ট্যারিফ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রিনেগোশিয়েশন চলছে। আমরা কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ধরে একটি বেঞ্চমার্ক প্রাইস নির্ধারণ করেছি।”

তিনি জানান, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ টাকা ৪৪ পয়সা প্রতি ইউনিট। অন্যান্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর ট্যারিফও এই মডেলে সমন্বয় করা হবে। দাম ব্যবধানে ২০-৩০ পয়সা পার্থক্য হতে পারে, তবে তা ৩-৪ টাকার ব্যবধান হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্পের দাম বেশি হওয়ায় চুক্তি বাতিলের দাবি উঠলেও তা বাস্তবে সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।

বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা স্বল্প মেয়াদের সরকার। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত থাকতে পারি। কিন্তু জ্বালানি খাতে সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। আজ খনি আবিষ্কৃত হলেও গ্যাস ব্যবহারে দুই-তিন বছর সময় লাগবে।”

গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “অনেকে বলছে দাম বাড়লে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। তাহলে ৭৫ টাকায় গ্যাস কেনার জন্য কেন ৬০০ কোম্পানি আবেদন করেছে?”

তিনি আরও জানান, সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আগের টেন্ডারে চারটি কোম্পানি টেন্ডার ডকুমেন্ট কিনলেও জমা দেয়নি। তাদের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে পিএসসি ডকুমেন্ট সংশোধন করে আবার টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, “দেশে নতুন করে গ্যাস সংকট শুরু হয়েছে। অনুসন্ধান কার্যক্রম তিনগুণ বাড়াতে হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে দেশের নিজস্ব গ্যাস মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে অনুসন্ধান বাড়ালে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক রয়েছে।”

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বাংলাদেশের জ্বালানি নীতির দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। ২০৪১ সালের জন্য সুস্পষ্ট জ্বালানি রূপান্তর পরিকল্পনা থাকতে হবে। এলএনজি আমদানির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা দেশীয় গ্যাস সম্পদ উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান, পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম এবং ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক সেরাজুল ইসলাম সিরাজ।