গাড়ি কিনতে যৌতুক না দেওয়ায় স্ত্রীকে মারধর, নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে মামলা

পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারধর, পরকীয়ায় জড়িত থাকা এবং হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তাঁর স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতি ঢাকার সিএমএম আদালত ও যশোরে পৃথক দুটি মামলা করেছেন।
চৈতির অভিযোগ, গাড়ি কেনার জন্য ২৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। মামলার পর স্বামী আসিফ তাঁকে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে হেনস্তা করার হুমকিও দেন বলে দাবি করেন তিনি।
যদিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আলী জিভাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলা আদালতে গড়িয়েছে, সেখানেই এর বিচার হবে। আমরা কখনো স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকিনি।
চৈতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, এবং আসিফও ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষার্থী। পূর্ব পরিচয় থেকে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁদের বিয়ে হয়। দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে এবং আগের সংসার থেকে চৈতির একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
চৈতির অভিযোগ, বিয়ের পর মাত্র এক মাস যেতে না যেতেই আসিফ তাঁর কাছে গাড়ি কেনার জন্য ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং বাবার বাড়িতে ফিরে চিকিৎসা নেন। আপসের মাধ্যমে আবারও শ্বশুরবাড়ি ফিরে গেলে, পরবর্তীতে একই দাবিতে আবারও নির্যাতন চালান আসিফ।
পরিবারের অসচ্ছলতা উল্লেখ করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ১৫ নভেম্বর যশোরে তাঁর বাবার বাড়িতে এসেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন চৈতি। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এরপর তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি এবং যশোর আদালতে আরেকটি মামলা করেন।
চৈতি আরও জানান, আসিফ পল্লবী নামে বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এই সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় তিনি আরও নির্যাতনের শিকার হন। এসব বিষয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।
বাদীপক্ষের আইনজীবী তাহমিদ আকাশ জানান, মামলার পরও পুলিশ এখনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি এবং আদালতের তিনটি ধার্য তারিখেও চার্জশিট জমা দেওয়া হয়নি, যা হতাশাজনক।
এদিকে আসিফ আলী জিভাল দাবি করেন, আমি বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। যে সময়ের ঘটনাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, তখন আমি অন্য বিভাগের ট্রেনিংয়ে ছিলাম। এই মামলাগুলো আমাকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করতেই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তিনি এখন আর আমার স্ত্রী নন, তাই যৌতুক চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আদালতেই এর সঠিক বিচার হবে।
আপনার মতামত লিখুন