ঘুষ-কেলেঙ্কারিতে বদলি, তবু বহাল বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও মফিজুর

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রকাশ: ২৭ মে, ২০২৫, ৫:৫৯
ঘুষ-কেলেঙ্কারিতে বদলি, তবু বহাল বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও মফিজুর

সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মফিজুর রহমান

দুদকে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও বদলির পর সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মফিজুর রহমান এখনো বহাল তবিয়তে একই কর্মস্থলে অবস্থান করছেন। ২৪ মে তারিখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে তাকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত (বদলি) করা হলেও, তিনি নানা কৌশলে কর্মস্থল ত্যাগ করেননি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন শাখা-২ এর উপসচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৫তম ব্যাচের এই কর্মকর্তাকে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা থেকে সরিয়ে রংপুর বিভাগে বদলি করা হয়। তবে মঙ্গলবার (২৭ মে) মফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নতুন ইউএনও যোগ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন।

২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বম্ভরপুরে ইউএনও হিসেবে যোগ দেন মফিজুর রহমান। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন নাগরিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, সীমান্ত চোরাচালান থেকে সুবিধা গ্রহণ, খনিজ সম্পদ পাচারে সহযোগিতা এবং প্রকল্প বরাদ্দে অনিয়মে তিনি জড়িত।

দুদকে দাখিল করা অভিযোগপত্রে মফিজুর রহমানের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবের তথ্যও যুক্ত করা হয়েছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি হিসাবে ২০২4 সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জমা ছিল ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার বেশি। ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর মাত্র তিনদিনেই সেখানে জমা পড়ে লক্ষাধিক টাকা, যার উৎস সন্দেহজনক।

চোরাচালান ও কালোবাজারির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ :

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ভারতের বিভিন্ন পণ্য—চিনি, মসলা, কসমেটিকস, কাপড়, গবাদিপশু ইত্যাদি—চোরাচালানের সঙ্গে ইউএনওর গোপন সমঝোতা ছিল স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও চোরাকারবারিদের সঙ্গে। এছাড়া, ধোপাজান ও জাদুকাটা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনে ইউএনও মফিজুর স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহায়তা করেছেন।

সরকারি তহবিল অপচয়ের নানা অভিযোগ :

উপজেলা প্রশাসনের মাল্টিপারপাস সেন্টারে একটি পাঠাগার থাকা সত্ত্বেও, তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসের পাশে আরেকটি পাঠাগার স্থাপন করেন, যা অপচয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, তিনি নিজের সরকারি বাসভবনের সামনে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি ডাইনিং রুম নির্মাণ করেছেন এবং পুকুর সৌন্দর্যবর্ধনে সাত লাখ টাকায় ঘাটলা তৈরি করেছেন। সরকারি তহবিল থেকে বিপুল অর্থ ব্যয়ে নৌকা কিনে পুকুরে ভাসানোর অভিযোগও রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, জুন ক্লোজিংয়ের আগে নতুন অর্থ বরাদ্দ পেতে তৎপরতা—এসব কারণেই বদলির পরও তিনি কর্মস্থল ছাড়তে নারাজ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

আন্দোলন দমন ও হামলার অভিযোগ :

তার অপসারণ দাবিতে স্থানীয়রা সম্প্রতি ‘কারেন্ট বাজারে’ মানববন্ধন করে। পরে সেই আন্দোলন দমন করতে ইউএনও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ভাড়া করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তারা যুবদল-ছাত্রদল পরিচয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়, যাতে অন্তত ১০ জন আহত হন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও মফিজুর রহমান বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবেন।”