জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ৬:২১
জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে

গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদকে সাংবিধানিক ও আইনগত বৈধতা দিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। একই সঙ্গে সনদের বৈধতা বা কর্তৃত্ব নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগও রাখতে চায় না তারা।

শনিবার কমিশন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো ‘পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়ায়’ এ সনদকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে বিদ্যমান সংবিধান বা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সনদের বিধানকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সনদের যেসব প্রস্তাব অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকর করতে হবে।

বহুল আলোচিত এ সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি কমিশনের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরাও স্বাক্ষর করবেন বলে জানানো হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ খসড়া পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স অভিযোগ করেছেন, খসড়ায় প্রকৃত ঐকমত্য নয়, বরং বিশেষ গোষ্ঠীর মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। একইভাবে বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেছেন, জনগণের আদালতে প্রশ্ন তোলার অধিকার অস্বীকার করা যাবে না।

জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাসও খসড়া পাওয়ার কথা জানিয়েছেন, তবে মন্তব্য স্থগিত রেখেছেন।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রিয়াজ জানিয়েছেন, ২০ আগস্ট পর্যন্ত খসড়া নিয়ে লিখিত মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। এরপর মাসের শেষ সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কমিশনের সমন্বিত খসড়ায় সনদের পটভূমি, দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হওয়া ৮৪ দফা সংস্কার প্রস্তাব এবং বাস্তবায়নের জন্য আট দফা অঙ্গীকার রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই সনদের প্রতিটি প্রস্তাব সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বলবৎ থাকবে এবং এর বৈধতা বা প্রয়োজনীয়তা কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

তবে চার মূলনীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি’কে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বর্তমান সংবিধানের জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কয়েকটি বামপন্থি দল।

বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেন, “মূলনীতির অংশে আমাদের আপত্তি ও সংলাপ বর্জনের তথ্য খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি। এটি প্রকারান্তরে চার মূলনীতিকে বাদ দেওয়ার কৌশল।” একই মত প্রকাশ করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

অন্যদিকে আলী রিয়াজ দাবি করেছেন, কমিশনের প্রস্তাবে কিছু দল ছাড়া অধিকাংশই একমত হয়েছে, এবং মূলনীতি বাতিল নয় বরং নতুন মূল্যবোধ যুক্ত করা হয়েছে।