টানা পঞ্চম দিনে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ, তেহরান ছাড়ছেন বাসিন্দারা

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫, ৩:৫৫
টানা পঞ্চম দিনে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ, তেহরান ছাড়ছেন বাসিন্দারা

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। টানা পঞ্চম দিনের মতো একে অপরের ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। মঙ্গলবার (১৭ জুন) উভয় দেশ তাদের হামলা আরও বিস্তৃত করেছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই হঠাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানবাসীদের শহর ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তার এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে তেল আবিবে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। অন্যদিকে, ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভোররাতে তেহরানজুড়ে বিস্ফোরণ এবং ভারী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল। নাতানজের পারমাণবিক স্থাপনাতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

পাঁচ দিনের এই সংঘাতে ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে ২২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েল জানিয়েছে, তাদের ২৪ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন এবং ক্ষয়ক্ষতির কারণে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে।” তবে কেন এমন আহ্বান তিনি জানিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তিনি আরও লিখেছেন, “ইরান যদি আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিত, তবে আজকের প্রাণহানি এড়ানো যেত। এটা অনর্থক ও দুঃখজনক। আমি স্পষ্ট করে বলছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেতে পারে না।”

হোয়াইট হাউজের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ট্রাম্প একদিন আগেই কানাডার জি-৭ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে আসেন। যদিও হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সরাসরি হামলা চালাচ্ছে না।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেন, ট্রাম্প এখনো ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, তেহরান এরই মধ্যে ওমান, কাতার এবং সৌদি আরবের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে—তারা যেন ট্রাম্পকে আহ্বান জানায়, যাতে তিনি ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য চাপে ফেলেন। এর বিনিময়ে ইরান পারমাণবিক আলোচনায় নমনীয়তা দেখাতে পারে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, “ট্রাম্প যদি সত্যিই কূটনীতি চান এবং যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী হন, তবে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই তার আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। তা না হলে আমাদের প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”

তেহরানে চরম আতঙ্ক

ইসরায়েলের সম্ভাব্য নতুন হামলার ঘোষণায় তেহরানে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শহর ছেড়ে যাওয়ার হিড়িকে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে নগরজুড়ে। বিবিসি বাংলার এক লাইভ রিপোর্টে জানানো হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সোমবার ঘোষণা দেয়, তেহরানের তৃতীয় জেলায় তারা যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে। ওই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ এবং সেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষ বসবাস করেন।

এই ঘোষণার পরই তেহরানের বিভিন্ন রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। গাড়ি, বাস, ট্রাকে করে দল বেঁধে শহর ছাড়তে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেকেই প্রয়োজনীয় মালপত্রসহ যাত্রা শুরু করছেন; কেউ আবার যানজটে আটকে পড়েছেন।

ফিলিং স্টেশনগুলোতেও দেখা গেছে লম্বা লাইন। জ্বালানি ভরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে চালকদের।

ইরান সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। নগরবাসী চরম অনিশ্চয়তা আর ভয়ের মধ্যে সময় পার করছেন। ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।