তারল্য সংকটে অর্থনীতির গতি শ্লথ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপ বাড়ছে

দেশের ব্যাংক খাতে চলমান তারল্য সংকট আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। সংকট মোকাবিলায় এখন ব্যাংকগুলোর প্রধান সহায় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেবল গত জুন মাসেই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপো ও স্পেশাল লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটিজ (এসএলএফ) হিসেবে নিয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘মানি মার্কেট ডাইনামিকস’ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
পূর্ববর্তী অর্থবছরে মাসপ্রতি গড়ে এ সহায়তার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে রেপো হিসেবে গড়ে ৯৪ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং এসএলএফ হিসেবে ৯৫ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেপো সুদহার ১০ শতাংশ এবং এসএলএফের সুদহার ১১.৫ শতাংশ। কলমানি মার্কেটে অর্থ না পেলে ব্যাংকগুলো রেপোর মাধ্যমে এবং সিআরআর ঘাটতি হলে এসএলএফ থেকে অর্থ নেয়। দুটো ক্ষেত্রেই সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রাখতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২২ সাল থেকেই এই সংকট শুরু হয়, যখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হয় দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর পতনের পর।
এখন ভালো অবস্থানে থাকা কিছু ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সস্তা ঋণ নিয়ে ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনে বড় মুনাফা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটিকে অনৈতিক চর্চা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
প্রবণতা অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত রেপো ও এসএলএফ গ্রহণের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। মে মাসে রেপোতে নেয়া হয় ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, জুনে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটিতে। একই সময়ে এসএলএফের পরিমাণও বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের রাজস্ব ঘাটতির কারণে ব্যাংক খাত থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নেয়া হচ্ছে, যা তারল্য সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে। চলতি অর্থবছরে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
এদিকে, দুর্বল ও লুটপাটের শিকার অন্তত এক ডজন ব্যাংক এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোটের বিপরীতে অর্থ নিয়ে চলছে।
তবে এত অর্থ নিয়েও এসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। যেমন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা পেয়েও গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, রেপো ও এসএলএফ নিয়ে যদি কেউ ট্রেজারি বন্ড কিনে মুনাফা করে, সেটা আইনি না হলেও অনৈতিক। আমাদের প্রত্যাশা, ব্যাংকগুলো এই চর্চা থেকে সরে আসবে। তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি আরও কমলে নীতিসূদহার কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার নেয়ার প্রবণতাও হ্রাস পাবে।
সব মিলিয়ে, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এখন শুধু একটি আর্থিক সমস্যা নয়, বরং নীতিগত ও আস্থা সংকটের দিকেও ইঙ্গিত করছে।
আপনার মতামত লিখুন