পরিবার পরিকল্পনায় ‘তসলিম চক্রের’ দুর্নীতির রাজত্ব, অঢেল সম্পদের অভিযোগ

স্বাস্থ্য খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ভিড়ে এবার উঠে এসেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) মোঃ তসলিম উদ্দীন খানের নাম। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অফিসের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্রয়ে ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পছন্দের ঠিকাদারকে অনিয়মের মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দেওয়া, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলার বিস্তর অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)।
গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে তসলিম উদ্দীন খানকে বিভাগীয় পরিচালক পরিবার পরিকল্পনা বরিশালে বদলি করা হলেও মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তিনি ১৪ জানুয়ারি বিপুল অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পুনরায় অধিদপ্তরে ফিরে এসে পরিচালক (আইইএম) পদে যোগ দেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, তসলিম উদ্দিন খান সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় সরকারের বিভিন্ন মহলে প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি করে গেছেন। এমনকি ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছিলেন আন্দোলন দমনে, যার অর্থ এসেছে তার দুর্নীতির টাকায়।
একাধিক প্রকল্পে চুক্তি অনুযায়ী মালামাল সরবরাহের আগেই শত শত কোটি টাকার বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন তিনি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিপুন প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী আট সপ্তাহের মধ্যে মালামাল সরবরাহের শর্ত থাকলেও চুক্তির মাত্র ছয় দিনের মাথায় পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়। বছর পেরিয়ে গেলেও মালামালের বড় অংশ এখনও অধিদপ্তরে এসে পৌঁছায়নি। একইভাবে এসএইড সার্জিক্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাত্র ৭০টি মেশিন সরবরাহ পাওয়ার পরই ২ কোটি ১২ লাখ টাকা বিলের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়, যেখানে বেশিরভাগ মেশিন অধিদপ্তর বুঝেই পায়নি।
এছাড়া দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করে সর্বনিম্ন দরদাতা ইন্টার-গ্রাফিক লিমিটেডকে বাদ দিয়ে নিপুন প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে তৎকালীন উপপরিচালক (বৈদেশিক সংগ্রহ) মোঃ শাহাদাত হোসাইন ও সদস্য সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম সহযোগিতা করেন। অভিযোগে বলা হয়, এসব অনিয়মের প্রত্যয়ন পত্রে স্বাক্ষর করেছেন তসলিম উদ্দিন খান নিজেই।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া অভিযোগে যে সম্পদের বিবরণ উঠে এসেছে তা থেকে তার দুর্নীতির চিত্র স্পষ্ট। রাজধানীর শনিরআখরায় (বাড়ি নং ৪৫, রোড নং ৩, পলাশপুর, পূর্ব দনিয়া) ১২ কোটি টাকা মূল্যের বহুতল ভবন, গুলশান নিকেতনে দুটি ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট, আফতাব নগরে তিনটি পাঁচ কাঠার প্লট, বনশ্রীতে ৫ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, এলিয়ন ব্রান্ডের গাড়ি, কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, স্ত্রীর নামে গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটে দুটি দোকান এবং কানাডায় অর্থ পাচার করে গড়ে তোলা বিলাসবহুল বাড়ির তথ্য রয়েছে দুদকে পাঠানো অভিযোগে।
অভিযোগকারীরা বলছেন, এসবই তদন্ত করে দেখা হলে রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাবে।
তসলিম উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বারবার তাঁর ফোন করে এমনি কি ম্যাসেজ পাঠিয়েও কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
আপনার মতামত লিখুন