পিজির পাশেই চিকিৎসকদের ক্লিনিক, রুগী ভাগানো ও অপারেশন বাণিজ্যের অভিযোগ

আওয়ামী লীগের দলীয় অনুষ্ঠান মঞ্চে ডা: আবুল কালাম চৌধুরী, ছবি - সংগৃহীত।
নিজ কর্মস্থল পিজি হাসপাতাল থেকে রুগী ভাগানোর সিন্ডিকেট চালিয়ে রাজধানীর হাতিরপুলে একটি হাসপাতাল পরিচালনা করছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আবুল কালাম চৌধুরী। তার পরিচালনায় থাকা ‘লিবার্টি হাসপাতাল’-এ, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের সাতটি লাইসেন্সের মধ্যে তিনটি নেই এবং বাকি চারটি লাইসেন্সের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এ হাসপাতালটি পরিচালনায় বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে অন্যতম হল— নিজ গ্রামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সদ্য সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং পিজি হাসপাতালের বিতাড়িত সাবেক উপাচার্য সরফুদ্দিনসহ আওয়ামীপন্থী একটি উচ্চশিক্ষিত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন ও দুর্নীতি।
শুধু তাই নয় আওয়ামীলীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবীদ, পুলিশ ও আমলার কালো টাকার বড় বিনিয়োগও পেয়েছিল এ সিন্ডিকেট।
সাম্প্রতিক বিএসএমএমইউতে কর্মরত প্রফেসর ডা. আবুল কালাম চৌধুরী, ডা. শেখ মুজাম্মেল হক, ডা. ফরিদ রায়হান, ডা. শরিফ উদ্দিন সিদ্দিকী এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের রেফার্ড বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ জমা পরেছে দুদকে। এদের মধ্যে ডা. আবুল কালাম চৌধুরী একাধিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সাথে জড়িত বলেও জানা গেছে।
আদালত সূত্র থেকে যানা যায়, লিবার্টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে পূর্বের এমডি বছির আহমেদ একটি সি আর মামলা (নং: CR-275/2023) দায়ের করেন।
এ মামলার সূত্র থেকে পূর্বের এমডি বছির আহমেদ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং তার ছেলে ডা. আবু নাসের বদরুদ্দোজা সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি, মিরপুর ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ। ক্যাশ প্রায় কোটি টাকা লিবার্টি হাসপাতালে বিনিয়োগ করেছেন পিতা পুত্র।
দুদকের অভিযোগ সূত্র থেকে জানা যায়, পিজিতে চাকুরীর সাইনবোর্ডের পাশাপাশি ডা. আবুল কালাম চৌধুরী লিবার্টি হাসপাতাল লি: এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ধানমন্ডি নিউ লাইফ হাসপাতালের ডিরেক্টর, হবিগঞ্জ হেলথ কেয়ার হাসপাতালের ডিরেক্টরসহ ছোট বড় অনেকগুলো হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের মালিকানায় আছেন। এতগুলো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার কারণ রেফার্ড বাণিজ্য চালিয়ে নেওয়া।
পিজি হাসপাতালের এক কিলোমিটারের মধ্যে রাজধানীর হাতিরপুলে নামসর্বস্ব লিবার্টি হাসপাতালে প্রতিদিন নিজের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রুগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। নিজে সার্জন হওয়ার কারণে বিগত ২ বছরে অপারেশন বানিজ্য করে প্রায় কোটি টাকা কামিয়েছেন।
প্রতিদিন ৫-৭ টা অপারেশন বাণিজ্য করে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন । যদিও লিবার্টি হাসপাতালে অপারেশন করার মত যান্ত্রিক ও অবকাঠামোগত সক্ষমতা নেই।
বেশ কয়েকবার নানা লিগ্যাল ইস্যুর কারনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হাসপাতালটি বন্ধ করতে চাইলেও আবুল কালাম চৌধুরীর রাজনৈতিক প্রভাবে তা সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগে জানানো হয়। হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য এক্সরে মেশিন পরিচালনায় এটোমিক এনার্জি লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক জেনেও তিনি কোনো এটোমিক এনার্জি লাইসেন্স না করেই হাসপাতাল বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিবেদকের অনুসন্ধান মতে, পরিবেশ, পারমানবিক ও নারকোটিক্স সনদ নেই লিবার্টি হাসপাতালের এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি (হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক), একই সাথে কারখানা ও ফায়ার সনদেরও মেয়াদ নেই লিবার্টি হাসপাতালের।
অভিযোগে আরও যা আছে, হাসপাতাল চালুর পর থেকে ডাক্তার পরিচালক গ্রুপ কয়েকশো অপারেশন বাণিজ্য করে এর সকল মেডিকেল বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ছেড়ে দিচ্ছেন। আবুল কালাম এক্ষেত্রে কোন ইটিপি প্লান বা কোনো পরিবেশ অধিদপ্তর লাইসেন্স-এর তোয়াক্কা করেননি। তাই গত ডিসেম্বরে পরিবেশ অধিদপ্তর ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধের আদেশ প্রদান করলেও নিয়মিত অপারেশন বাণিজ্যসহ পুরো হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সার্ভিস কার্যক্রম চালু রেখেছেন।
যদিও নিষেধাজ্ঞা আদেশের কোন তোয়াক্কা না করে এর বিরুদ্ধে একটি আপিল করে প্রতিনিয়ত অপারেশন বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বাড়িওয়ালার ১৩ মাসের ভাড়া বাবদ ৬৫ লাখ, জেনারেটর ২০লাখ, ধার নেওয়া বাবদ ১৭ লাখ সহ মোট ১,০২,০০০,০০ (এক কোটি দুই লাখ) টাকা প্রদান করেননি। এই বকেয়া ভাড়া চাইলে আবুল কালাম চৌধুরী সিন্ডিকেট প্রবাসী বাড়িওয়ালাকে নানা হুমকি দিয়েছেন।
আবুল কালাম চৌধুরী কোনরুপ মালিকানা কাগজপত্র ছাড়াই ফ্লোর দখলের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোতালেব টাওয়ারের রিয়া বিল্ডার্স এমডি জাহাঙ্গীর আলম, জমির মালিক আনোয়ার হোসেন, মনির হোসেনকে সাথে নিয়ে আলাদা ৩টা ভুয়া ভাড়া চুক্তি করে ভূমিদস্যুতার কাজ করেছেন। এ ব্যপারে বাড়িওয়ালা কর্তৃক একটি ভূমিদস্যুতার মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে।
অভিযোগে থেকে আরও জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ১৭ বছর তিনি পিজি হাসপাতাল এবং পিজি স্পেশালাইজড হাসপাতালের বিভিন্ন কেনাকাটায় পাহাড়সম অনিয়ম, চাকুরী বানিজ্য সহ অগনিত দুর্নীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এজন্য তিনি সাবেক বিতাড়িত উপাচার্য প্রফেসর ডা.সরফুদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, প্রক্টর ডা. ফারুক মুন্সী, সাবেক পিএস ডা. রাসেল গং এর সমন্বিত একটি বিশেষ সিন্ডিকেট এর অন্যতম সদস্য ছিলেন।
বর্তমান অবস্থায় ডা. আবুল কালাম চৌধুরী তাঁর এক সহকর্মী বিএসএমএমইউর জেনারেল সার্জারী বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা: শেখ মুজাম্মেল হককে এমডি বানিয়ে নিজে আড়লে থাকার চেষ্টা করছেন, এমন দাবি করা হয় দুদকে জমা পরা অভিযোগে।
আপনার মতামত লিখুন