পোল্ট্রি খামারের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বরগুনার দেশান্তরকাঠী গ্রামবাসী, স্থানান্তরের দাবি

মো. জসিম উদ্দিন, বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩০ জুলাই, ২০২৫, ১১:৫৮
পোল্ট্রি খামারের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ বরগুনার দেশান্তরকাঠী গ্রামবাসী, স্থানান্তরের দাবি

বরগুনার বেতাগী উপজেলার দেশান্তরকাঠী গ্রামের শত শত মানুষ মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে পড়েছেন। গ্রামের মধ্যেই গড়ে ওঠা একটি বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ফার্মের দূষণ ও অব্যবস্থাপনায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ডায়রিয়া ও চর্মরোগের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে দিন কাটছে স্থানীয়দের। ফার্ম থেকে ছড়িয়ে পড়া দুর্গন্ধ, বর্জ্য ও মরা মুরগির যত্রতত্র ফেলার ফলে জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে কষ্টকর। এ পরিস্থিতির অবসান চেয়ে এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিবিচিনি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ঘনবসতিপূর্ণ দেশান্তরকাঠী গ্রামের ‘মল্লিক পোল্ট্রি ফার্ম’ ঘিরে এ দুর্ভোগের সূত্রপাত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারের পাশেই খোলা জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে মুরগির বিষ্ঠা। সেই ময়লা বৃষ্টির পানিতে গলে পাশের খালে গিয়ে মিশছে। স্থানীয় জামে মসজিদ ও মাদ্রাসার সন্নিকটে ফার্মটি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও মুসল্লিদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শামিম অভিযোগ করে বলেন, “মুরগির বিষ্ঠার গন্ধে ঘরে টিকতে পারি না। শিশু-কিশোররা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বহুবার ফার্ম মালিককে বলেও কোনো লাভ হয়নি।”

অভিযোগের বিষয়ে ফার্মের মালিক সাফায়েত মল্লিক বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের পেছনে পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি স্বীকার করছি। আমি প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশসম্মত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”

এই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কালোন বলেন, “মুরগির ফার্মে দুর্গন্ধ তো হবেই। একটা সালিশি বৈঠক হয়েছিল, তবে আমি যাইনি।”

অবশ্য, জনস্বার্থে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বেতাগীর ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বিপুল শিকদার বলেন, “জনবসতির ভেতর ফার্ম স্থাপন করা ঠিক নয়। আগেও স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশনা অমান্য করে খামার পরিচালনা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা এরইমধ্যে ফার্ম স্থানান্তরের দাবিতে গণস্বাক্ষরসহ লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন ইউএনও কার্যালয়ে।

এখন দেখার বিষয়—উপজেলা প্রশাসনের হুঁশিয়ারির পর ফার্মটি আদৌ অন্যত্র সরানো হয় কি না। দেশান্তরকাঠী গ্রামের মানুষ এখন কেবল অপেক্ষায়—একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নির্বিঘ্নে নিঃশ্বাস নেওয়ার।