প্রশাসনিক গড়িমসিতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা, আন্দোলনের প্রস্তুতি সাত কলেজে

শনিবার বিকালে ইডেন মহিলা কলেজের গেইটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা, ছবি - নিউজনেক্সট।
ঢাকার সরকারি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রোববার (১৯ মে) এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারির আহ্বান জানিয়েছে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আগামী ১৬ জুনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিও জানিয়েছে তারা। অন্যথায় শিক্ষা ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
শনিবার বিকেলে ইডেন মহিলা কলেজের প্রধান ফটকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ‘সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলন’-এর নেতৃবৃন্দ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিমুল আবিদ ও বেগম বদরুন্নেছা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাফরিন আক্তার।
জাফরিন আক্তার বলেন, “২৭ জানুয়ারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব দেয়। প্রায় আড়াই মাস পার হলেও তা অনুমোদন পায়নি, যা অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি আরও জানান, ইউজিসি ইতোমধ্যে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা, লোগো ও কাঠামো তৈরি করেছে। অথচ অজানা কারণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন এখনো ঝুলে আছে, যা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না মেলায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখনো গঠিত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, ভর্তি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে।
তানজিমুল আবিদ বলেন, “শুক্রবার রাতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আমাদের জানিয়েছেন, প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন হবে। না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।”
তিনি পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেন:
১. রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।
২. সেশনজট নিরসন, অতিরিক্ত ফি বন্ধ, ভুতুড়ে ফলসহ শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
৩. অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের পরপরই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি দিতে হবে।
৪. পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা, লোগো ও মনোগ্রাম প্রকাশ করতে হবে।
৫. ১৬ জুনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বাজেটেও অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।
এদিকে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে এবার তারা সরাসরি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবে, যাতে জনদুর্ভোগ না হয় সেদিকেও নজর রাখা হবে।
সাত কলেজের প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবিত রূপরেখা :
ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ—এই সাতটি সরকারি কলেজে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারি কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ১৬ মার্চ এসব কলেজ নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের ঘোষণা আসে।
ইউজিসি একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের রূপরেখা প্রণয়ন করে, যার আওতায় একজন ‘যোগ্য’ অধ্যক্ষের নেতৃত্বে সাময়িক প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রেজিস্ট্রার, ভর্তি ও হিসাব বিভাগের প্রতিনিধিরা থাকবে এবং সাত কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সেই কাঠামোর কার্যক্রম পরিচালিত হবে সংশ্লিষ্ট কোনো কলেজ থেকে এবং সাত কলেজের জন্য থাকবে পৃথক হেল্প ডেস্ক। পুরো কাঠামো ইউজিসির তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো গঠনের পথ প্রশস্ত করবে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি শুধু প্রশাসনিক দেরি নয়, বরং দীর্ঘদিনের অবহেলার ধারাবাহিকতা। তাদের দাবি, এই অবমূল্যায়নের অবসান ঘটিয়ে দ্রুত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন