ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন: ষড়যন্ত্র না কৌশল? ইতিহাস কী বলে

By আন্তর্জাতিক ডেস্ক

3 Min Read

‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ শুনতে যেন সিনেমার গল্প, কিন্তু বাস্তবে এটি আধুনিক রাজনীতি ও যুদ্ধনীতির এক ঘৃণ্য বাস্তবতা। এটি এমন এক ধরনের কৌশল, যেখানে কোনো রাষ্ট্র বা সংগঠন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হামলা বা বিশৃঙ্খলা ঘটায়, কিন্তু তার দায় চাপায় প্রতিপক্ষের ঘাড়ে। সাধারণ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করাই এর উদ্দেশ্য।

এই কৌশলের শিকড় সামরিক ইতিহাসে। একসময় সমুদ্রে যুদ্ধরত জাহাজগুলো শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে নিজেদের পতাকা সরিয়ে শত্রুর পতাকা ওড়াত সেখান থেকেই এসেছে এই ‘ফলস ফ্ল্যাগ’।

আজকের দিনে ফলস ফ্ল্যাগ মানে, নিজেই অপরাধ করো, আর দোষ দাও শত্রুকে।

যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করা হোক, কিংবা জনগণের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর এক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আধুনিক সময়ে ফলস ফ্ল্যাগের বহুমুখী রূপ দেখা যায়, বর্তমানে শুধু সামরিক নয়, ফলস ফ্ল্যাগ কৌশল ব্যবহৃত হয় সাইবার হামলা, জঙ্গি হামলা কিংবা মিডিয়া প্রপাগান্ডায়ও।

যেমন, কোনো রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী এমনভাবে একটি সাইবার আক্রমণ করে যেন মনে হয়, হামলাটি করেছে প্রতিপক্ষ। এই ‘ডিজিটাল ছদ্মবেশ’ তৈরি করে আসল হামলাকারী থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিহাসে যেসব ঘটনাকে ফলস ফ্ল্যাগ বলে মনে করা হয়

রাইহস্ট্যাগ অগ্নিকাণ্ড (জার্মানি, ১৯৩৩)

হিটলারের নাৎসি বাহিনী জার্মান পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়ে তার দায় চাপায় কমিউনিস্টদের ওপর। এটি ব্যবহার করে দেশজুড়ে দমন-পীড়ন চালানো হয়।

- Advertisement -

গ্লিওয়িৎস ইনসিডেন্ট (জার্মানি, ১৯৩৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে জার্মান সেনারা পোলিশ সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে নিজ দেশে হামলা চালিয়ে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পথ তৈরি করে।

অপারেশন নর্থউডস (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬২)

- Advertisement -

মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে জাল হামলা চালিয়ে কিউবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন।

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলা এবং পাকিস্তানের অভিযোগ

সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করছে—এই হামলা ভারতের নিজস্ব সাজানো চক্রান্ত, এক ক্লাসিক ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর উদ্দেশ্য—কাশ্মীরে কঠোর দমননীতি চালানো, পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা এবং ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সহানুভূতি আদায়।

কেউ কেউ একে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বললেও, ইতিহাস বলছে—ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন শুধু কাল্পনিক থিওরি নয়, বরং বহুবার প্রমাণিত কৌশল। এটি একটি রাষ্ট্রের নিজস্ব জনগণের সঙ্গেই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ বা নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ঘটনার দায় কার, তা এককভাবে নির্ধারণ না করে প্রয়োজন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত।

কারণ—রাজনীতি, সামরিক শক্তি ও কৌশল যখন একত্র হয়, তখন সত্য বড় বেশি ঝাপসা হয়ে যায়।

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন: ষড়যন্ত্র না কৌশল? ইতিহাস কী বলে

By আন্তর্জাতিক ডেস্ক

3 Min Read

‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ শুনতে যেন সিনেমার গল্প, কিন্তু বাস্তবে এটি আধুনিক রাজনীতি ও যুদ্ধনীতির এক ঘৃণ্য বাস্তবতা। এটি এমন এক ধরনের কৌশল, যেখানে কোনো রাষ্ট্র বা সংগঠন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হামলা বা বিশৃঙ্খলা ঘটায়, কিন্তু তার দায় চাপায় প্রতিপক্ষের ঘাড়ে। সাধারণ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণ করাই এর উদ্দেশ্য।

এই কৌশলের শিকড় সামরিক ইতিহাসে। একসময় সমুদ্রে যুদ্ধরত জাহাজগুলো শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে নিজেদের পতাকা সরিয়ে শত্রুর পতাকা ওড়াত সেখান থেকেই এসেছে এই ‘ফলস ফ্ল্যাগ’।

আজকের দিনে ফলস ফ্ল্যাগ মানে, নিজেই অপরাধ করো, আর দোষ দাও শত্রুকে।

যুদ্ধের অজুহাত তৈরি করা হোক, কিংবা জনগণের মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়া—সব ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর এক হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আধুনিক সময়ে ফলস ফ্ল্যাগের বহুমুখী রূপ দেখা যায়, বর্তমানে শুধু সামরিক নয়, ফলস ফ্ল্যাগ কৌশল ব্যবহৃত হয় সাইবার হামলা, জঙ্গি হামলা কিংবা মিডিয়া প্রপাগান্ডায়ও।

যেমন, কোনো রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী এমনভাবে একটি সাইবার আক্রমণ করে যেন মনে হয়, হামলাটি করেছে প্রতিপক্ষ। এই ‘ডিজিটাল ছদ্মবেশ’ তৈরি করে আসল হামলাকারী থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিহাসে যেসব ঘটনাকে ফলস ফ্ল্যাগ বলে মনে করা হয়

রাইহস্ট্যাগ অগ্নিকাণ্ড (জার্মানি, ১৯৩৩)

হিটলারের নাৎসি বাহিনী জার্মান পার্লামেন্টে আগুন লাগিয়ে তার দায় চাপায় কমিউনিস্টদের ওপর। এটি ব্যবহার করে দেশজুড়ে দমন-পীড়ন চালানো হয়।

- Advertisement -

গ্লিওয়িৎস ইনসিডেন্ট (জার্মানি, ১৯৩৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে জার্মান সেনারা পোলিশ সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে নিজ দেশে হামলা চালিয়ে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পথ তৈরি করে।

অপারেশন নর্থউডস (যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৬২)

- Advertisement -

মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে জাল হামলা চালিয়ে কিউবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন।

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলা এবং পাকিস্তানের অভিযোগ

সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ পাল্টা দাবি করছে—এই হামলা ভারতের নিজস্ব সাজানো চক্রান্ত, এক ক্লাসিক ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এর উদ্দেশ্য—কাশ্মীরে কঠোর দমননীতি চালানো, পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা এবং ভারতীয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সহানুভূতি আদায়।

কেউ কেউ একে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বললেও, ইতিহাস বলছে—ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন শুধু কাল্পনিক থিওরি নয়, বরং বহুবার প্রমাণিত কৌশল। এটি একটি রাষ্ট্রের নিজস্ব জনগণের সঙ্গেই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ বা নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ঘটনার দায় কার, তা এককভাবে নির্ধারণ না করে প্রয়োজন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত।

কারণ—রাজনীতি, সামরিক শক্তি ও কৌশল যখন একত্র হয়, তখন সত্য বড় বেশি ঝাপসা হয়ে যায়।

newsnextbd20
Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *