বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান দেখেও দেখেন না, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জে নিয়ম-কানুন ও বন আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে চলছে বালু ও কাঠের অবৈধ বাণিজ্য। রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. খালেকুজ্জামানের বিরুদ্ধে উঠেছে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে সংরক্ষিত বনের সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে টাকা দিলেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কাঠ কাটা ও বালু উত্তোলনের অনুমতি মেলে। এমনকি, জব্দ করা বালু পর্যন্ত তিনি অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন।
জব্দ বালু ‘মৌখিক নির্দেশে’ বিক্রি
২০২৫ সালের ৬ মে, কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের রমিজ পাড়া ঢালার মুখে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে ১ হাজার ঘনফুট অবৈধ বালু জব্দ করা হয়। বালুর ওপর লাল পতাকা টাঙিয়ে চিহ্নিতও করা হয়েছিল।
কিন্তু ১২ মে, সারা দিন ডাম্প ট্রাক ব্যবহার করে ওই বালু গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জব্দ করা বালু ছাড়িয়ে দেন। স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাকের হোসেন ও আসহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে কিছুদিন আগেই ঢালার মুখ সংরক্ষিত বনের ভেতরে পাহাড় কেটে এসব বালু উত্তোলন করা হয়েছিল।
নাটকীয় ‘জব্দ’ ও ‘ছাড়’ নাটক
স্থানীয়রা জানায়, রেঞ্জ কর্মকর্তা প্রথমে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে বালু জব্দ করেন, কিন্তু পরবর্তীতে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আবার সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “রক্ষক যখন ভক্ষকে পরিণত হয়, তখন পাহাড় ও বন কীভাবে টিকে থাকবে?”
এলাকাবাসীর ভাষ্য মতে, রেঞ্জ কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতির ভিত্তিতে বালু উত্তোলনের যন্ত্রপাতিও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশ করে। পরে সচেতন মহলের চাপ ও গণমাধ্যমে প্রতিবাদ উঠলে ‘নাটকীয়’ভাবে অভিযান চালিয়ে বালু জব্দ দেখানো হয়।
সাংবাদিকদের হুমকি ও রাজনৈতিক মদদ
অভিযোগ রয়েছে, বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের হেনস্তার হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয়রা বলছেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একজন ‘ছত্রছায়ায় থাকা’ ছাত্রলীগ নেতার সুপারিশে চাকরি পান এবং সেই রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেই এখন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন।
বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নীরবতা রহস্যজনক
বারবাকিয়া বিট কর্মকর্তা জানান, বালু বিক্রির বিষয়টি তিনি “এইমাত্র” জেনেছেন এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, রেঞ্জ কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বারবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি বালু বিক্রির দায় স্বীকার বা অস্বীকার করেননি।
এদিকে, এক বনকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে সুফল বাগান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আসা বরাদ্দের টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। অথচ সেই বাগানে কোনো রক্ষণাবেক্ষণের কাজই হয়নি।
সচেতন মহলের দাবি, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ)-কে একাধিকবার জানানো হলেও তারা কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি। তাদের এই নীরবতা স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন