বিটিভিতে সম্প্রচার হতে পারে শেখ হাসিনার ট্রাইব্যুনাল প্রসিডিংস

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ১:৪০
বিটিভিতে সম্প্রচার হতে পারে শেখ হাসিনার ট্রাইব্যুনাল প্রসিডিংস

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) দাখিল করা হবে আগামীকাল, রোববার (১ জুন)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ চার্জ উপস্থাপন করা হবে। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে শুনানির কোর্ট প্রসিডিংস রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে।

শনিবার (৩১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল যদি অনুমতি দেয়, তাহলে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গৃহীত হওয়ার শুনানি বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

এর আগে ১২ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ‘জুলাই-আগস্ট গণহত্যা’ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে ওই গণহত্যার নির্দেশদাতা, উসকানিদাতা ও মাস্টারমাইন্ড হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। রোববার এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

সেইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, তদন্তে শেখ হাসিনা ছাড়াও আরও দুই ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, “তদন্ত শুরুর ৬ মাস ২৮ দিনের মধ্যে তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনাকে ‘সুপিরিয়র কমান্ডার’ এবং গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ এনেছে।”

প্রধান অভিযোগসমূহ:

প্রথম অভিযোগ অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে বক্তব্য দেন, যা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দলীয় কর্মীদের ‘প্ররোচনার’ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এই বক্তব্যের পরপরই বিভিন্ন বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্রসহ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ড্রোন, হেলিকপ্টার ও মরণাস্ত্র ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত সাধারণ মানুষকে দমন ও ধ্বংস করতে। তদন্তে এ সংক্রান্ত কল রেকর্ড ও অডিও-ভিডিও সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

বাকি তিনটি অভিযোগ নির্দিষ্ট ঘটনাকেন্দ্রিক, যেখানে শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি করেছে তদন্ত সংস্থা। এসব ঘটনায় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, আহতদের চিকিৎসা না দেওয়া এবং মৃতদেহ পোড়ানোর মতো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি। নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অসংখ্য নারী। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, এমনকি গুরুতর আহতদের হাসপাতাল ত্যাগে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পোস্টমর্টেম ও চিকিৎসা প্রক্রিয়ায়ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, “সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে তা আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা নিজেই তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এসব অপরাধ প্রমাণিত হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।”