ভবিষ্যতের ফেনী গড়ছেন বাতেন: প্রশাসনের সাহসী পুনর্গঠন

পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন, ছবি - নিউজনেক্সট।
মানুষের চিন্তা, মনন ও নেতৃত্বগুণের মাপকাঠি তার কর্ম। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, উদারতা, স্বচ্ছতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে অল্প সময়েই ফেনী পৌরবাসীর হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নাগরিক সেবার মানোন্নয়ন, দুর্যোগ মোকাবিলা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে তার নিরন্তর প্রয়াস শহরের চিত্রই বদলে দিয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফেনী পৌরসভা ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, যানবাহন ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভবনের নিচতলা পানিতে ডুবে অচল হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। জনপ্রতিনিধিশূন্য পৌরসভায় এ অবস্থায় নাগরিক সেবা প্রায় থমকে যায়। ঠিক তখনই স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো. বাতেন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ভেঙে পড়া কাঠামোকে আবার সচল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা শুরু করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে একযোগে দিনরাত পরিশ্রম করে ধীরে ধীরে পুরোনো কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনেন।
প্রথমেই তিনি নজর দেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জায়গাগুলিতে। আগে পৌরসভায় জন্ম-মৃতু্য নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশ সনদ কিংবা পারিবারিক সনদের মতো সেবাগ্রহণে চরম হয়রানির শিকার হতো সাধারণ মানুষ। দায়িত্ব নিয়েই তিনি এসব কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনেন। পৌরসভায় কেউ যেন ভোগান্তির শিকার না হয়—তা নিশ্চিত করতে তিনি নিজে তদারকি শুরু করেন। ফলাফলও মিলেছে দ্রুত—সাধারণ মানুষের কাজ এখন হয় কম সময়ে, হয়রানি ছাড়াই।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন, নতুন রাস্তা নির্মাণ এবং বিদ্যমান সড়কগুলোকে আরসিসি দ্বারা ঢালাই করার কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। অনেক ওয়ার্ডে আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না, সেখানে পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই তিনি পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগী হন। বছরের পর বছর অবহেলিত খালগুলো চিহ্নিত করে খনন কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে পাগলির ছড়া, দমদমা, দাউদপুর, কুমড়ার ছড়া, আরামবাগ, মধুয়াই ও নিরানি ছড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ খালগুলোতে খনন ও পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
একইসঙ্গে শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তিনি বিভিন্ন সড়কের পাশে ডিভাইডার, সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে পরিবেশ উন্নয়নের কাজ শুরু করেছেন। পৌর এলাকার অলিতে-গলিতে মশক নিধন কর্মসূচি চলছে এবং এটি নিয়মিতভাবে চলবে বলে জানান তিনি।
প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন নিউজ নেক্সটকে বলেন, “দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। আমি থাকাকালীন সময় অন্তত যেন পৌরসভায় কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছি। নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি।”
তিনি আরও বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পৌরসভার রাস্তা, ড্রেন, ডাম্পিং ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা ও অন্যান্য নাগরিক সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানে কাজ করছি। অনেক ওয়ার্ডে সোলার স্ট্রিট লাইট বসানো হয়েছে, গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হয়েছে। রাস্তাঘাটে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করা হচ্ছে। আজমিরী বেগম সড়ক, আদালতপাড়া সংলগ্ন বঙ্গবীর সড়ক, বাদশা মিয়া সড়কসহ শান্তি আবাসিক এলাকায় নতুন আরসিসি ঢালাই রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৮টি ওয়ার্ডেই উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সরকারি রাস্তার পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ কাজও চলছে।
ফেনী পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য সুলতানপুর এলাকায় সাততলা স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পৌরসভার অফিসে টাইলস বসানো ও নতুন ফার্নিচারে সজ্জিত করা হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার সময় যেসব গাড়ি নষ্ট ছিল, তা ধাপে ধাপে সচল করা হয়েছে।
ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির উদ্দিন বলেন, “আগুনে পুড়ার পর এবং বন্যার মত ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে থেকেও আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে পৌরসভাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছি। নাগরিক সেবা দিতে আমরা নিরলস কাজ করছি।”
স্বল্প সময়ে এমন পরিবর্তন এনে পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন প্রমাণ করেছেন, সদিচ্ছা আর নিষ্ঠা থাকলে একটি ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানকেও আলোর পথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন