ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৌশল কী হওয়া উচিত?

জোবায়ের আহমেদ
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল, ২০২৫, ৫:১৫
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৌশল কী হওয়া উচিত?

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় এক অশান্ত সময়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক পদক্ষেপ, সীমান্তে সেনা মোতায়েন, এমনকি এলওসি-তে গোলাগুলি—সব মিলে পরিস্থিতি ঠেকেছে যুদ্ধপ্রবণ চূড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থান এবং কৌশল কেমন হওয়া উচিত, তা এখন কেবল একটি কূটনৈতিক প্রশ্ন নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্ন।

কৌশলগত নিরপেক্ষতা ও উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা

প্রথমেই বলা দরকার, ভারত ও পাকিস্তান—উভয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশের রয়েছে ভিন্ন ধরনের কৌশলগত সম্পর্ক। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে থাকা, পানি বিতরণ চুক্তি, বাণিজ্যিক নির্ভরতা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা যেমন রয়েছে, তেমনি পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় যোগাযোগের ব্যাকড্রপ। ফলে যেকোনো পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থান বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক।

বাংলাদেশের উচিত হবে ‘কৌশলগত নিরপেক্ষতা’ বজায় রাখা। জাতিসংঘ, ওআইসি কিংবা সার্কের ছাতার নিচে দ্বিপাক্ষিক শান্তি আহ্বান ও আলোচনার পক্ষে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ। এতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ভারসাম্য যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলে উদার ও শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি আরও সুদৃঢ় হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব: সংকটের ছায়া বাজার ও বাণিজ্যে

যুদ্ধ পরিস্থিতি যত ঘনিয়ে আসবে, এর সরাসরি ও পরোক্ষ অর্থনৈতিক অভিঘাত পড়বে বাংলাদেশের ওপর। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি ও আমদানির গন্তব্য। যেকোনো যুদ্ধ বা অবরোধ, আঞ্চলিক বাণিজ্যপথে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে স্থলবন্দর ও ট্রানজিট পণ্যের ক্ষেত্রে জট তৈরি হবে।

এর বাইরেও রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি ও পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার হুমকি। যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ভারত আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত জ্বালানি, গম বা ভোগ্যপণ্য কিনতে শুরু করলে দাম বাড়বে বৈশ্বিকভাবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা বাড়ায় বাংলাদেশ একটি অস্থিতিশীল মূল্য পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে।

শ্রমবাজার ও রেমিট্যান্সের সম্ভাব্য ধাক্কা

যুদ্ধকালীন উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান পুনঃপর্যালোচনা করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বা রেমিট্যান্স প্রবাহেও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বিমানের রুট পরিবর্তন বা ফ্লাইট বাতিলের মতো ঘটনা ঘটলে প্রবাসীদের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে জটিলতা সৃষ্টি হবে।

যুদ্ধ নয়, শান্তিই হোক বাংলাদেশ কৌশলের মূল কথা

সবশেষে, এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলেও, তা একসঙ্গে সুযোগও হতে পারে। নিরপেক্ষ ও দৃঢ় অবস্থান নিয়ে, ভারত-পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে শান্তি রক্ষায় উদ্যোগী হলে বাংলাদেশ আঞ্চলিক কূটনীতিতে নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে পারে।

একটি পরিণত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্বার্থনির্ভর পররাষ্ট্রনীতিই এখন সময়ের দাবি।