ভিজল মাঠ, শুকিয়ে গেল আশা- লোকসানে লবণ চাষিরা

টানা বৃষ্টির কারণে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন কক্সবাজারের প্রান্তিক লবণ চাষিরা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লবণ মাঠে পানি জমে যাওয়ায় তিনদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছেন চাষিরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। তবে টানা বৃষ্টির কারণে অন্তত দেড় লাখ মেট্রিক টন লবণ কম উৎপাদন হতে পারে।
ইসলামপুর, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, লবণ মাঠে পানি জমে থাকায় চাষিরা মাঠে যেতে পারছেন না। দোকানপাটে কিংবা বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন তারা।
লবণ চাষিরা বলছেন, রোদ না থাকায় আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এতে চাষিরা আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।
চাষিরা জানান, বর্তমানে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়, অথচ একই পরিমাণ লবণ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ২৮০ টাকারও বেশি। ফলে মণপ্রতি ১২০ টাকা, কেজিপ্রতি ৩ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে।
তাদের অভিযোগ, লবণ মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দাম কমিয়ে দিয়েছে। অথচ প্যাকেটজাত পরিশোধিত লবণ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কেজি দরে।
বিসিক সূত্র জানায়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এ বছর ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। এ পর্যন্ত (শেষ শুক্রবার পর্যন্ত) উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন লবণ। তবে শনিবার ভোর থেকে অবিরাম ভারি বর্ষণে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ, কক্সবাজার সদর ও বাঁশখালীতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে লবণ উৎপাদন।
চাষিদের আহ্বান: চাই প্রণোদনা ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা বলছেন, তারা প্রণোদনার প্রত্যাশায় আছেন। বিশেষ করে যারা বর্গাচাষি, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন চাষি বলেন, সরকার যদি দাম নির্ধারণ করে না দেয়, তাহলে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে আমাদের দেউলিয়া করে ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন এলাকা হিসেবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে দেশকে আমদানিনির্ভর হতে হতে পারে।
উল্লেখ্য, লবণ উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩৭ হাজার চাষি ও ৭৫ হাজার শ্রমিক। পরিবহন, মিল, বাজারজাতকরণসহ মোট প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
আপনার মতামত লিখুন