মঠবাড়িয়া পৌরসভায় পানি সরবরাহে অনিয়ম, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরসভায় সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক আবদুল কাইয়ূম এর নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাকিল সরোয়ারকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটর অন্য দুই সদস্য হলেন, উপজেলা প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার লিটন।
এ কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক সামাজিক মাধ্যমে মঠবাড়িয়া পৌর শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপণার কথা সামাজিক যোগ্যোগ মাধ্যমে তুলে ধরে পৌর নাগরিকদের মতামত আহ্বান করেন।
এতে পৌর প্রশাসক বলেন, মঠবাড়িয়া প্রথম শ্রেণীর পৌরসভার পানি সরবরাহে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১ সালে ৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে সূর্যমণি বধ্যভূমি সংলগ্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ প্ল্যান্ট নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো দূরুহ এবং ব্যয়বহুল। এমনকি বিদ্যুতের সঠিক ভোল্টেজ না থাকলে পাম্প চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বিকল্প হিসেবে প্ল্যান্টে একটি জেনারেটর থাকলেও অত্যাধিক গরম হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। একাধিকবার মেরামত করেও এটি পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। ১ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় পরিপূর্ণভাবে পানি সরবরাহ ব্যহত হয়। দুইবার পানি সরবরাহ করার জন্য প্রায় ১৮ ঘন্টা মটর চালাতে হয়।
সূর্যমনি পানি সরবরাহ প্ল্যান্ট শহর থেকে থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। এই ৬ কিলোমিটার এমএস পাইপ এতটাই নিম্নমানের এবং দুর্বল যে স্থাপনের কিছুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র এবং ফাটল দেখা যায়। ছিদ্র এবং ফাটল দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ লিটার পানি অপচয় হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত ছিদ্র মেরামত এবং পাইপ প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এতো বিশাল লাইন মেরামত করে শেষ করা যাচ্ছে না। ছয় কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনে অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য পৌরসভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পানির বিল নিয়ে গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ উঠছে। তবে বিল স্বয়ংক্রীয় মিটারে নির্ধারণ করা হয় বিধায় ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পৌরসভা সূত্রে জানাগেছে, পানি সরবরাহ প্রকল্প স্থাপনে অনিয়মে অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সালেক মঠবাড়িয়া পৌরসভা থেকে বদলি হয়ে প্রথমে মূলাদী এবং বর্তমানে গৌরনদী পৌরসভায় কর্মরত রয়েছেন।অন্যদিকে ওই সময়ের পৌর মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস বর্তমানে আত্মগোপনে। অপরদিকে পানি প্রকল্পের ফাইল গায়েবের ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পৌর প্রশাসন শাস্তিজনিত বদলি করেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রকৌশলী আব্দুস সালেক বলেন ,আমি বদলি হওয়ার সময় সকল কাগজপত্র উপ -সহকারী প্রকৌশলী ফারজানা ইয়াসমিনের কাছে হস্তান্তর করে এসেছি। তার কাছে পানি প্রকল্পের ফাইল সহ সকল মালামাল সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আব্দুল কাইয়ুম বলেন , পৌরসভায় অনিয়মের সাথে জড়িত কেউ এক বিন্দু পরিমান ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যে অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, পৌরসভায় অপ্রতুল জনবল এবং সীমিত সম্পদের মাধ্যমে পৌরসভা ও পৌরবাসিগন যথাযথ সেবা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
আপনার মতামত লিখুন