মানিকগঞ্জে নামের আগে ‘ডা.’ ব্যবহার করে প্রতারণা, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বলড়া বাজারে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করে নামের আগে ‘ডা.’ লেখা এবং ভুয়া চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিনজনের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্তরা হলেন—আব্দুস সালাম চৌধুরী, ইসমাইল চৌধুরী ও ইউসুফ চৌধুরী। তারা কেউই এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী নন, তবুও নিজেদের ‘বিশেষজ্ঞ রেজিস্টার্ড চিকিৎসক’ পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগী দেখে আসছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বলড়া বাজারে ‘চৌধুরী ফার্মেসি’তে বসে নিয়মিত রোগী দেখছেন আব্দুস সালাম চৌধুরী। তার প্রেসক্রিপশন প্যাডে স্পষ্টভাবে ‘ডা.’ লেখা রয়েছে, যেখানে তিনি নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
রোগীপ্রতি ১০০ টাকা ভিজিট নেওয়া হয়, যা আইনত অবৈধ।
সালাম চৌধুরীর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা এক শিশুর মা জানান, জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত মেয়েকে চিকিৎসা করাতে তিনি এখানে এসেছেন। তিনি বলেন, ডাক্তার সাহেব ইনজেকশন আর ওষুধ লিখে দিয়েছেন, ২ হাজার টাকা বিল হয়েছে। সব ওষুধ এখানেই কিনতে হয়েছে।
তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত তিনজনই কিছু প্যারামেডিক বা কোর্স সম্পন্ন করলেও তারা নিবন্ধিত চিকিৎসক নন।
তবুও তারা নিজেরা চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখছেন, এমনকি শিশুদের সুন্নতে খাতনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসাও করছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম চৌধুরী বলেন, আমি ‘ডা.’ লিখতে পারি, এটা আমার এখতিয়ার।
তিনি হাইকোর্টের আদেশ সম্পর্কে জানতে না পারার অজুহাতও দেন।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম রাসেল জানান, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ নামের আগে ‘ডা.’ ব্যবহার করতে পারে না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, বিএমডিসি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী, ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডা.’ শব্দ ব্যবহার করলে তা হবে আইন লঙ্ঘন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতারণামূলকভাবে চিকিৎসা দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে এই চক্র। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন