যশোরে জমেনি ঈদ পরবর্তী প্রথম চামড়ার হাট

ঈদুল আজহার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট হিসেবে পরিচিত যশোরের রাজারহাটে জমে ওঠেনি ঈদের পরের প্রথম হাট। প্রত্যাশা থাকলেও হাটে ব্যবসায়ী ও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কমে গেছে চামড়ার লেনদেনও, ফলে হতাশ হয়েছেন প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা।
কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি থেকে ৩৮৯টি ছাগলের চামড়া নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক। দুপুরের মধ্যে তিনি ২০০টি চামড়া বিক্রি করলেও বাকি চামড়াগুলোর জন্য কোনো ক্রেতা পাননি। বাধ্য হয়ে মাত্র ১০ টাকা দরে বাকি চামড়া বিক্রি করে তাকে লোকসান নিয়ে ফিরতে হয়।
রাজ্জাক বলেন, “প্রতিটি চামড়া গ্রামে ৫০-৬০ টাকায় কিনেছি। সংরক্ষণ, লবণ ও পরিবহনসহ প্রতি চামড়ায় খরচ হয়েছে অন্তত ৭৫-৮০ টাকা। কিন্তু হাটে এসে ১০-১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছি।”
বসুন্দিয়া থেকে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী ভক্তি বিশ্বাস বলেন, “সরকার প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ২০-২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ আড়তদাররা গোটা চামড়ার দামই বলছেন ২০ টাকা। এতে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।”
রাজারহাটের আড়তদার গিয়াস উদ্দিন জানান, তিনি এদিন গড়ে ৫০০ টাকা দরে ১০০টি গরুর চামড়া কিনেছেন। ঈদের দিনেও দাম ছিল ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে।
হাটের ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবু জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০টি জেলা থেকে চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীরা এ হাটে আসেন। তবে এবার ঢাকার বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা আসেননি, ফলে লেনদেন হয়নি প্রত্যাশামতো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী শনিবারের হাটে অবস্থা ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, “চামড়ার কোনো ক্যাটাগরি নির্ধারণ না করেই দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
ব্যবসায়ী হাসিব চৌধুরী বলেন, “মাদ্রাসাগুলোকে লবণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভালো হলেও ঠিকমতো তদারকি না থাকায় অনেক চামড়া নষ্ট হয়েছে।” তিনি এদিন ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় ১৯০টি গরুর চামড়া কিনেছেন।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অকিল আহমেদ বলেন, “ঈদের পর রাজারহাটে এমন স্থবিরতা আগে দেখিনি। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেওয়া লবণের ভর্তুকিও কাজে আসেনি। বরং বাজারমূল্য কমানো হলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও লাভবান হতেন।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “সরকার সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আগামীতে চামড়ার বাজার আরও বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”
রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, এবারের হাটে প্রায় ৫ হাজার চামড়া হাতবদল হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। ট্যানারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত না থাকায় এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ কম থাকায় বাজারে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।
আড়তদারদের মতে, ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা না পাওয়ায় এবং বছর বছর লোকসানে পড়ায় অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী এবার আর চামড়ার ব্যবসায় নামেননি। ফলে চামড়ার বাজারে যে দীর্ঘদিনের সংকট চলছে, তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।
আপনার মতামত লিখুন