যশোরে শত মা’কে ঘিরে এক ভালোবাসার সকাল

যশোর প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ২:১৫
যশোরে শত মা’কে ঘিরে এক ভালোবাসার সকাল

একাকীত্ব, অবহেলা আর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার বেদনা ভুলে এক সকালে হাসলেন শতাধিক মা। বয়স তাঁদের ৬০ পেরিয়েছে বহু আগেই, কিন্তু সেই বয়সের ক্লান্তি ছাপিয়ে তাঁদের মুখে ফুটে উঠেছিল শৈশবের মতো সরল আনন্দ। কারণ যশোরে জয়তী সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী ফল উৎসব—যা ছিল প্রবীণ মায়েদের জন্য নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক উৎসব।

শনিবার সকালে জয়তী সোসাইটির ৬০ ঊর্ধ্ব নারীসেবা কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন শতাধিক প্রবীণ মা, যাঁদের অনেকেই বছরের পর বছর পরিবার ও সমাজের অবহেলায় নিঃসঙ্গ দিন কাটিয়ে আসছেন। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি নূরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জয়তী সোসাইটির সভাপতি কাজী লুৎফুন্নেসা, নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, প্রোগ্রাম ম্যানেজার রোকনুজ্জামান, হারুন অর রশিদ, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সুদীপ্ত প্লাবনসহ অন্যান্য নির্বাহী সদস্যরা।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে অর্চনা বিশ্বাস বলেন, “এই বয়সে এসে অনেক মায়েরা একা হয়ে পড়েন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এই মায়েদের জন্য কিছুটা প্রশান্তির ব্যবস্থা করতেই আমাদের এই আয়োজন।” তার এই কথা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।

মধু মাসকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই উৎসবে প্রবীণ মায়েদের পরিবেশন করা হয় আম, কাঁঠাল, কলা, দই, চিড়া, মুড়ি ও মিষ্টি। খাবারের প্রতিটি কামড় যেন মায়েদের মুখে হাসির পরশ বুলিয়ে দেয়। শুধু তৃপ্তির আয়োজনেই থেমে থাকেনি আয়োজনটি—উপহার হিসেবে প্রতিটি মাকে দেওয়া হয় ২ কেজি করে আম। এই উপহার ছিল কেবল ফল নয়, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার ছোট্ট প্রকাশ।

অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তোলেন সঞ্চালক বর্ণালী সরকার। তাঁর স্নিগ্ধ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ছিল ঘরোয়া ও আন্তরিক আবহ। একেকজন মা যেন মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন তাঁদের বয়স, ক্লান্তি আর একাকীত্ব।

জয়তী সোসাইটি জানায়, তাদের ৬০ ঊর্ধ্ব নারীসেবা কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে প্রায় ৪০০ জন মা রয়েছেন। আজকের আয়োজনে অংশ নিতে পেরেছেন ১০০ জন। তবে বাকি ৩০০ জন মায়ের জন্যও সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটে ধাপে ধাপে এ ধরনের উৎসব আয়োজন করা হবে।

২০০৮ সালের ৮ মার্চ প্রতিষ্ঠিত জয়তী সোসাইটির এই কর্মসূচি মূলত সমাজের অবহেলিত প্রবীণ নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই গড়ে ওঠে। তাঁদের মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে সংগঠনটি নিয়মিত নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

এই একদিনের উৎসব হয়তো সমাজ বদলাবে না, কিন্তু বদলে দিয়েছে শত মা’য়ের একটি সকাল—ভরে দিয়েছে তাঁদের হৃদয়, ভালোবাসা আর সম্মানের ছোঁয়ায়।