যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার কমলেও চাপ রয়ে গেল বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনা শেষে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক হার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে ওয়াশিংটন। একাধিক দফা উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় দুই দেশ।
শুক্রবার ভোরে (বাংলাদেশ সময়) ট্রাম্প প্রশাসনের চূড়ান্ত ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যে নতুন এই সম্পূরক শুল্কহার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশাধিকার বজায় রাখা এবং পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছিল। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেই হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আদেশ অনুযায়ী, শুধু বাংলাদেশ নয়—আরও কয়েক ডজন দেশের ওপর ভিন্ন ভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনাম রয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গত ২ এপ্রিল বৈশ্বিক বাণিজ্য ঘাটতির অজুহাতে এসব শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা পরে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।
এই সময়সীমা শেষে ১ আগস্ট (আজ) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। ফলে বাংলাদেশকে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক (পুরনো গড় ১৫% ও নতুন ২০%) পরিশোধ করতে হবে। তবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডা বাদে বাকি দেশগুলোর জন্য এই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ৭ আগস্ট থেকে।
এদিকে পাল্টা শুল্ক ইস্যুতে আলোচনা করতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে।
তিন দিনব্যাপী বৈঠকে তারা মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (USTR) দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
দলের অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শুল্কহার পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে প্রতিনিধিদল সূত্রে জানা গেছে।
চাপ রয়ে গেল বাংলাদেশের
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক কিছুটা কমলেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চাপ কমছে না। বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী মহল আশঙ্কা করছেন, আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর শুল্কের প্রভাব পড়লে মার্কিন ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিতে অর্ডার কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে সরকার ও শিল্প মালিকদের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, দেশের গার্মেন্ট খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক সরাসরি কাজ করেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে কম শুল্কহার থাকলেও, সম্ভাব্য অর্ডার হ্রাস এবং ন্যূনতম অর্ডার স্থগিত হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাজারে চীন, ভিয়েতনাম এবং ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের জন্য মূল্য ও গুণগত মান বজায় রেখে রপ্তানি চালু রাখা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়বে। শুল্ক ছাড়প্রাপ্তির বিষয়েও নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনার মতামত লিখুন