যুক্তরাষ্ট্রে ১২ দেশের নাগরিকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এবং আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বুধবার (৪ জুন) এক নির্বাহী আদেশে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, যা কার্যকর হবে আগামী সোমবার থেকে।
সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় যেসব দেশের নাম রয়েছে সেগুলো হলো: আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। আর যেসব দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো: বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা।
নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার পর এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প জানান, কলোরাডোর বোল্ডারে ইহুদিদের একটি র্যালিতে পেট্রলবোমা হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি একজন অবৈধ অভিবাসী। তবে ঘটনাটিতে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি মিসরের নাগরিক হলেও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় মিসরের নাম নেই, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, গত রোববার দুপুরে কলোরাডোর একটি ইহুদি সমাবেশে পেট্রলবোমা হামলা হয়, যেখানে কেউ নিহত না হলেও বেশ কয়েকজন আহত হন। হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। ঘটনার পরপরই তাকে আটক করা হয়।
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছেন অনেক বিশ্লেষক। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ট্রাম্প কয়েকটি মুসলিমপ্রধান দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয় এবং আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
এদিকে একই দিনে ট্রাম্প আরও একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অতিরিক্ত যাচাইয়ের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই আদেশ মূলত চীন, ইরান, রাশিয়া ও ভেনেজুয়েলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। অভিবাসী এবং নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে এনে নিজের নির্বাচনী অবস্থান শক্ত করতে চাইছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা দাবি করছেন, এই পদক্ষেপ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় জরুরি।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই নিষেধাজ্ঞাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসননীতিকে আরও কঠোর ও অমানবিক করে তুলবে। মুসলিম সিভিল রাইটস সংগঠন CAIR বলেছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা অধিকাংশ দেশই মুসলিমপ্রধান বা আফ্রিকান, যা ট্রাম্প প্রশাসনের বৈষম্যমূলক প্রবণতা স্পষ্ট করে।
এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নতুন অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন অভিবাসন আইনজীবীরা।
আপনার মতামত লিখুন