রাজশাহীতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১:৩১
রাজশাহীতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

অভিযুক্ত এসএম মাকসুদুর রহমান ও বরন সরকার, ছবি - সংগৃহীত।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বরত ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) বরন সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য, পক্ষপাতিত্ব ও সাধারণ মানুষকে হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও হয়রানির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সম্প্রতি এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগকারীদের দাবি, টাকা ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নেন না তাঁরা। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি বিশেষ পক্ষের পক্ষে কাজ করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ইনচার্জ মাকসুদুর রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় এসআই বরন সরকার হয়ে উঠেছেন বেপরোয়া। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানির মতো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। অধিকাংশ অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বও বরন সরকারকে দেওয়া হয়।

বড়গাছি গ্রামের বাসিন্দা আজিবুল হাসান জানান, ইউপি সদস্য উকিল আলীর ভাই তাঁর ওপর হামলা করলে তিনি তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করেন। “তদন্তের দায়িত্ব বরন সরকার পান। তিনি আমাকে ডেকে এনে উকিল আলীকে ফোন দেন। সেই ফোন থেকেই আমাকে হুমকি দেওয়া হয়—তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হবে। রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত আছে,” বলেন তিনি।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও গোগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, “এসআই বরন সরকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন। রাতে তল্লাশির নামে অহেতুক হয়রানি করেন। ওসিকে জানালেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

গত বুধবার কৃষ্ণবাড়ি গ্রামে নারীদের ঝগড়ার একটি ঘটনায় বরনের পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিবাদে স্থানীয়দের তোপের মুখে তাকে এলাকা ছাড়তে হয়।

তৈয়বুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী জানান, জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিরোধে বরন সরকারের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতমূলক। “আমরা যখন অভিযোগ নিয়ে যাই, বরন ইনচার্জের কানে কিছু বলার পর আমাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়,” বলেন তিনি।

হরিশংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম হাসান রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নিজের জমিতে গাছ লাগানো নিয়ে বিরোধ হলে পুলিশি সহায়তা নিতে গেলে বরন সরকার আমাকে উল্টো ভয়ভীতি দেখান এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বলেন, জমিতে গেলে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হবে। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

এসআই বরন সরকার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি কাউকে গালিগালাজ করি না। আমার ফোন থেকে কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা।” তবে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেন।

রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম বলেন, “লিখিত অভিযোগটি এখনও দেখা হয়নি। তবে অভিযোগগুলো সত্য হলে তা অত্যন্ত গুরুতর। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের ফোন থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সত্যি হলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”

প্রেমতলী তদন্ত কেন্দ্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এমন অনিয়মের অভিযোগ হয়ে আসছে। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।