রাজশাহীতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে, সংঘর্ষে রক্তাক্ত নেতাকর্মীরা

রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা প্রকট হয়ে উঠেছে। এলাকা ভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার ও নেতৃত্ব নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা এখন রক্তাক্ত রূপ নিচ্ছে। দলীয় সমঝোতা বৈঠকেও উত্তেজনা প্রশমিত না হয়ে সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
সর্বশেষ, ২৭ জুলাই রাত পৌনে ১২টার দিকে চারঘাট উপজেলার সরদহ ট্রাফিক মোড়ে ছাত্রদল আহ্বায়ক হাসান মোহাম্মদ আলীর ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান যুবদল নেতা তুষার আলী ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় হাসান গুরুতর আহত হন এবং পরিবারের দাবি অনুযায়ী, তার শরীরে শতাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে। একই হামলায় আহত হন ছাত্রদল কর্মী সেন্টু। পরে দুজনকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে হাসানকে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি এখন মৃত্যুশয্যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হাসান ও তুষারের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধ মেটাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের বাড়িতে সমঝোতার বৈঠক ডাকলেও তা ব্যর্থ হয় এবং তার কিছুক্ষণ পরেই হামলার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া ৩০ জুলাই সকালে বাঘার মনিগ্রাম ইউনিয়নের মহদিপুর হিলালপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হন। প্রধান শিক্ষক আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। ঘটনার দিন প্রধান শিক্ষক সমর্থকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। আহতদের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন।
এর আগে, ৫ জানুয়ারি বাঘার আড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হন। এতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের অনুসারী রেজাউল করিম ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের ঘনিষ্ঠ অনোয়ার হোসেন পলাশের অনুসারীরা জড়িত ছিলেন।
জেলা বিএনপির এক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গত বছর ৫ আগস্টের ঘটনার পর চাঁদাবাজি, দখল ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে বহু সংঘর্ষ হয়েছে। যেহেতু এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাবশালী নেতার অনুসারী, তাই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। ফলে সহিংসতা বাড়ছে।”
বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “বাঘা-চারঘাটে যে অবস্থা চলছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করছে। দ্রুত সমাধান না হলে আগামী নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”
আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক সভাপতি নুজরুল ইসলাম বলেন, “বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি সংঘাতে রূপ নেয়, তাহলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রশ্ন হচ্ছে—এই সংঘাত কি ইচ্ছাকৃতভাবে উসকে দেওয়া হচ্ছে না? বিষয়টি দলের হাই কমান্ডকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।”
আপনার মতামত লিখুন