শহীদের পরিবার ছাড়া ‘মুগ্ধ দিবস’, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন আয়োজন

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) একমাত্র শহীদ, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহাফুজুর রহমান মুগ্ধকে স্মরণে সিন্ডিকেটে অনুমোদিত ‘শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস’ যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩০তম সিন্ডিকেট সভায় ১৮ জুলাইকে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে এ বছর দিবসটি পালনের কার্যক্রম ছিল সীমিত ও সমন্বয়হীন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক লিয়াকত আলী অডিটোরিয়ামে একটি স্মরণসভা আয়োজন করলেও তা ‘শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস’ হিসেবে প্রচার করা হয়নি। একই দিনে মসজিদে দোয়া ও মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয় মুগ্ধসহ অন্যান্য শহীদদের স্মরণে। তবে শহীদ মীর মুগ্ধের পরিবারের কেউ এসব আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন না।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) একই সময়ে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ উপলক্ষে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদত বার্ষিকীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা অংশ নিলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে কোনো জাতীয় পর্যায়ের অতিথিকে দেখা যায়নি। বিষয়টি ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, দিবসটিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ ছিল খুবই দুর্বল। শহীদ মীর মুগ্ধের নামেই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক প্রচার না করা এবং পরিবারের কাউকে আমন্ত্রণ না জানানো প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা প্রকাশ করে।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, এই আয়োজনটি ‘শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস’ নামেই হওয়া উচিত ছিল, যাতে এটি ধারাবাহিকভাবে পালিত হয়। তাঁর পরিবার ও উপদেষ্টা মণ্ডলীর কাউকে না আনাও বড় ঘাটতি।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিজবুল্লাহ তামিম বলেন, এই দিবস কেবল একটি ব্যক্তির শাহাদতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। মজলুমের লড়াইয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে।
অন্য শিক্ষার্থী শাহিন বলেন, সিন্ডিকেটে পাস হওয়ার পরও দিনটিকে যথাযথভাবে পালন না করা অনুপ্রেরণাহীনতার পরিচয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো শহীদ মীর মুগ্ধ স্মরণে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন—দিবস ঘোষণাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ‘শহীদ মীর মুগ্ধ তোরণ’ নামকরণ, টিএসসির সামনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, রাষ্ট্রীয় বিচার চেয়ে আবেদন, ও একটি স্মৃতি কর্নার স্থাপন। পরবর্তীতে এসব দাবি সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মূল ফটকের নাম পরিবর্তন ছাড়া বাকি দাবিগুলোর বাস্তবায়ন এখনো দৃশ্যমান নয়।
এ বিষয়ে ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, ১৮ জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধ শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে। অন্যান্য দাবিগুলোও ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আজকের সব আয়োজন শহীদ মীর মুগ্ধর স্মরণে করা হয়েছে। তবে কিছু ব্যস্ততার কারণে তাঁর পরিবার ও উপদেষ্টাদের উপস্থিত করতে পারিনি। ভবিষ্যতে আমরা বিষয়গুলো মাথায় রেখে আরও পরিকল্পিতভাবে আয়োজন করবো।
তিনি আরও জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ঠিকভাবে সমন্বয় করতে না পারায় অনুষ্ঠানে কিছু ঘাটতি হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে তা কাটিয়ে ওঠা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আপনার মতামত লিখুন