সমন্বয়কদের মামলা বাণিজ্য, কুবি সমন্বয়ক ও জেলা আহ্বায়কের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুবি প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২৫, ২:১৭
সমন্বয়কদের মামলা বাণিজ্য, কুবি সমন্বয়ক ও জেলা আহ্বায়কের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ও জেলা পর্যায়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে ‘মামলা বাণিজ্য’ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও অসন্তোষ প্রকাশ পেয়েছে। আন্দোলনের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বিতর্কিত মামলা।

২০২৪ সালের ২ অক্টোবর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হামলার অভিযোগে মো. এমরান হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায়। মামলায় নাম উল্লেখ করা হয় ৯৬ জনের, যার মধ্যে তিনজন ইতোমধ্যে মৃত। আরও ১৫০–২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মামলা নিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য বা ‘বাণিজ্য’ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

১৬ মে রাতে কুবির কয়েকজন সমন্বয়ক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, জেলা আহ্বায়ক মো. সাকিব হোসেনের অনুরোধেই মামলাটি দায়ের করেন এমরান। সংবাদ সম্মেলনে এমরান হোসেন বলেন, “কেউ যদি তার ব্যক্তিস্বার্থে বা টাকার বিনিময়ে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়ে থাকে, আমি তা ঘৃণা করি। মামলাটি জেলা আহ্বায়ক সাকিব হোসেন ভাই করিয়েছেন। আমি এই মামলার দায়ভার নিতে পারি না।”

কেন এতদিন পর এই অভিযোগ তুলছেন— এমন প্রশ্নে এমরান বলেন, “আমি নিয়মিতই বিভিন্ন কথা শুনতাম, কিন্তু সেগুলো বলার সুযোগ পেতাম না। এখন যখন দেখি আমাদের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম চলছে, তখন চুপ করে থাকার সুযোগ নেই। আমাকে মামলা করাতে এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল।”

আরেক সমন্বয়ক পাভেল রানা জানান, “এ মামলায় এমন অনেকের নাম রয়েছে, যাদের আমরা চিনি না। পরে এমরান এসে জানায়, মামলাটি নিয়ে বাণিজ্যের খবর সে পেয়েছে। আমি তাকে বলি, আমাদের পরিচিত আইনজীবী তরিকুল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে।”

অন্যদিকে, এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক মো. সাকিব হোসেন। তিনি বলেন, “আমি কোনো মামলার সঙ্গে জড়িত না। মামলা বাণিজ্য করে থাকলে সেটা বাদী, বিবাদী বা প্রশাসন কেউই করতে পারে—তবে আমি করিনি।”

ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে কুমিল্লায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভেতরে দীর্ঘদিনের নেতৃত্ব সংকট এবং ভাঙনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মামলার মতো স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সমন্বয়কারীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আন্দোলনের ভবিষ্যৎকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।