পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অন্যতম সাবেক কর্মকর্তা ওয়ারেস উল মতিন, যিনি প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সাবেক নৌবাহিনীর পদচ্যুত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রভাবিত হয় এবং ব্যাংকের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় জঙ্গি অর্থায়নসহ নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তিনি বাইরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সুবিধা দিয়ে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হয়রানি ও মামলার জালে জড়াতেন।
ওয়ারেস উল মতিনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, ভুয়া সরবরাহকারী দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিএসআর খরচ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা থাইল্যান্ডে পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কাজে তিনি সাবেক এসএসএফ প্রধান মুজিবুর রহমান এবং বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সহযোগিতা পেয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, পদত্যাগের আগে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ নথি ধ্বংস করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া আংশিক নথি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পূর্ণাঙ্গ ফরেনসিক তদন্ত অপরিহার্য।
২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শত শত জনকে অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হয়, যেখানে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন ও অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০২২ সালে সাবেক এমডিদের প্রভাবিত করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন ওয়ারেস উল মতিন। এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি বোর্ড অনুমোদন ছাড়া ১৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, যার ফলে ২০২৪ সালে ব্যাংক ৮.৫৩ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে।
সিএসআর বাজেট অপব্যবহারের অভিযোগও গুরুতর। মেট্রোরেল উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন দিবস ও বিজয় দিবসের বিজ্ঞাপনের জন্য ২১.৯১ কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও কোনো কার্যক্রমই বাস্তবে হয়নি। একইভাবে ২০২৩ সালে ২ লাখ কম্বল কেনার জন্য ৬.১৮ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়, কিন্তু বিতরণে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাদের জোর করে অনৈতিক নথিতে স্বাক্ষর করানো হয়েছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ওয়ারেস উল মতিন ব্যাংকে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতেন, যা কর্মীদের ভীত-সন্ত্রস্ত রাখত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হলে ওয়ারেস উল মতিন ও তার সহযোগীরা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তবে এসব অনিয়মের কারণে সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ, অভ্যন্তরীণ নথি জালিয়াতি, নীতি লঙ্ঘন ও স্বচ্ছতা নষ্ট করার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে সাউথইস্ট ব্যাংকের আস্থার সংকট কাটাতে দ্রুত ও স্বাধীন তদন্ত অপরিহার্য।
এ বিষয়ে ওয়ারেস উল মতিনের বক্তব্য নিতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
