সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুলিশি হেফাজতে ভস্মীভূত হওয়ার অভিযোগ

পাবনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে জব্দকৃত তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিক্সা পুলিশি হেফাজতে থাকাবস্থায় আগুনে ভস্মীভূত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২১ জুন) সকালে পুলিশ লাইনের স্টাফ মেসের সামনের মাঠে রাখা অটোরিক্সাগুলো আগুনে পুড়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার (২০ জুন) এসব অটোরিক্সা আটক করা হয়। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। তবে পুলিশি হেফাজতে এমন ঘটনা অস্বাভাবিক জানিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী অটোরিক্সা চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার গাছপাড়া বাইপাস থেকে ফিটনেস ও কাগজপত্রে ত্রুটি থাকার অভিযোগে বেশকিছু সিএনজিচালিত অটোরিক্সা জব্দ করে জরিমানা ও মামলা দেয় যৌথবাহিনী। পরে জব্দকৃত অটোরিক্সাগুলো পুলিশ লাইন কম্পাউন্ডে স্টাফ মেসের সামনের মাঠে রাখা হয়।
সেখানে থাকাবস্থায় শনিবার সকালে হঠাৎই তিনটি অটোরিক্সা থেকে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সে আগুন নেভাতে চেষ্টা করলেও একটি অটোরিক্সা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত ও আরো দুটি আংশিক পুড়ে যায়।
ভুক্তভোগীদের দাবি, শুরু থেকে পাবনার সড়কগুলোতে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চালানোয় কোনো সমস্যা না থাকলেও কোনো নোটিশ ছাড়া হঠাৎই শুক্রবার বেশকিছু অটোরিকক্সা আটক করে মামলা দেয় যৌথবাহিনী। এরপর চালকেরা নিজে চালিয়ে ভালো গাড়ি রেখে গেলেও পরদিন সকালে পুলিশ বলছে একাই আগুন লেগে পুড়ে গেছে তিনটি গাড়ি।
পাবনা সদর উপজেলার জোত আদম গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হয়ে খুইয়েছেন নিজের সর্বস্ব। সবশেষ গত দুমাস আগে জমি বন্ধক রেখে প্রায় ৩ লাখ টাকায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা কিনে নিজেই চালাতে শুরু করেন। এসময়ে পুলিশি ঝামেলা না দেখা গেলেও হঠাৎই গত শুক্রবার পুলিশ ও সেনাবাহিনী অন্যদের সাথে তার অটোরিক্সাও আটক করেন। মামলা দেন ১০ হাজার টাকার। এরপর নিজে চালিয়ে কোনোরকম ত্রুটিহীন অটোরিক্সা পুলিশ লাইনের মাঠে রেখে যান বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে হাফিজুল ইসলাম বলেন, নিজে গাড়ি পুলিশ লাইনের ভেতরে রেখে গেছি। পুলিশ চাবি নিয়ে মামলার টোকেন ধরিয়ে দিলো। টাকা নাই, বাধ্য হয়ে চাচার থেকে ধার করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মামলা ভাঙিয়ে আসার পর পুলিশ বলছে একাই আগুন লেগে গাড়ি পুড়ে গেছে। গিয়ে দেখি গাড়ি একেবারে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র সামনের গ্লাসটা আছে। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি। এর মধ্যে পুলিশি হেফাজতে কিভাবে গাড়িতে আগুন লাগলো? আর ৩ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ এখন কে দেবে? হয় অক্ষত অবস্থায় আমার গাড়ি ফিরিয়ে দিক, না হয় দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। তাছাড়া আমি কিভাবে সংসার চালাবো।
চাটমোহরের চালক কবির হোসেন বলেন, আমার অটোরিক্সাও অর্ধেক পুড়ে গেছে। এই পোড়া গাড়ি ঠিক করাতে এত্তোগুলো টাকা লাগবে। এই টাকা কোথায় পাবো? আমরা আমাদের গাড়ির ক্ষতিপূরণ চাই।
আটঘরিয়ার অটোরিক্সা চালক মোস্তফা কামাল বলেন, হঠাৎ সকালে শুনি গাড়িতে আগুন লেগেছে। ছুটে এসে জানলাম আমার গাড়ির পেছনের তিনটা গাড়িতে আগুন লেগেছে। অল্পের জন্য আমারটা বেঁচে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়- পুলিশের কাছে আমাদের গাড়ি নিরাপদ কি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি জানি না। তবে শুনেছি একটি অটোরিক্সায় হঠাৎই আগুন লেগে যায় এবং তার দুইপাশে থাকা দুইটি অটোরিক্সাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আগুন লাগা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অটোরিক্সার সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে এমনটি ঘটতে পারে। সেটির দায় তো পুলিশ নেবে না। তাছাড়া পুরো পুলিশ লাইন এরিয়া সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। ঠিক কিভাবে আগুন ধরলো সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
আপনার মতামত লিখুন