সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় হাঁসের পাল নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন রমজান আলী

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক গ্রামের সাধারণ মানুষ রমজান আলী। কখনো ভাবেননি যে শখের বসে শুরু করা হাঁস পালন একদিন হয়ে উঠবে তার জীবনের মূল অবলম্বন। কিন্তু ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম ও লক্ষ্যকে সঙ্গী করে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন একজন সফল হাঁস খামারী হিসেবে। তার এই সফলতা এখন শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং পুরো এলাকাবাসীর জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের নলুয়াদিঘী গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি শুরু করেন হাঁস পালনের কাজ, যা শুরুতে ছিল একেবারেই শখের বসে। প্রথমদিকে মাত্র ২০-২৫টি হাঁস নিয়ে ছোট পরিসরে খামার শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে সেই সংখ্যা বাড়তে থাকে তার যত্ন, ভালোবাসা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার ফলে। আজ তার খামারে রয়েছে ৩০০-৩৫০টি দেশি হাঁস, যা থেকে তিনি নিয়মিত আয় করছেন।
বর্তমানে হাঁস পালনই তার মূল পেশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ভোরে বিশাল হাঁসের পাল নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন আশপাশের জলাভূমি ও খোলা মাঠের দিকে। বর্ষা মৌসুমে মাঠে পানি জমে যাওয়ায় হাঁস পালনের জন্য এটি হয়ে ওঠে আদর্শ পরিবেশ। হাঁসগুলো প্রাকৃতিক খাবার যেমন ছোট মাছ, শামুক, কচুরিপানা ইত্যাদি খেয়ে বড় হয়, ফলে খাদ্য খরচ অনেকটাই কমে আসে।
রমজান আলী জানান, প্রাকৃতিকভাবে হাঁসগুলো খাবার খায় বলে রোগবালাইও কম হয়। আর এতে ডিম উৎপাদনও হয় বেশি। প্রতিদিন আমার হাঁসগুলো প্রচুর ডিম দেয়, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভালো আয় হয়।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে তিনি হাঁস ও ডিম বিক্রি করে গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। হাঁসের ডিম স্থানীয় হাট-বাজারে খুব চাহিদাসম্পন্ন, ফলে দামও ভালো পান। আয়ের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবং খামার আরও বড় করার লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছেন রমজান আলী।
ইতিমধ্যে তিনি খামারে সহায়তার জন্য দুইজন সহযোগীকেও নিয়োগ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এলাকার বেকার যুবকদের কাজের সুযোগ করে দিতে চান তিনি।
রমজান আলীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রমজান আলীর মতো উদ্যোক্তারা দেশীয় হাঁস পালনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। তাঁরা রমজান আলীর খামার ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, টিকা, ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের খামার গড়ে ওঠলে শুধু একজন উদ্যোক্তারই নয়, গোটা এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের দপ্তরের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
রমজান আলী তার প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, একাগ্রতা ও পরিশ্রম থাকলে যেকোনো মানুষই সফলতা অর্জন করতে পারে। তার এই সাহসী ও দূরদর্শী পদক্ষেপ এখন এলাকার তরুণদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, শুরুতে অনেকেই হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু আমি আমার লক্ষ্য ঠিক রেখেছিলাম। এখন তারাই এসে পরামর্শ চায় খামার করার ব্যাপারে।
রমজান আলীর এই সফল পথচলা এখন অনেকের কাছেই অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। শুধু হাঁস পালন নয়, একজন ব্যক্তি কীভাবে নিজের শ্রম, মেধা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারে—তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে রয়েছেন তিনি।
রমজান আলীর এই উদ্যোগ আমাদের শিখিয়ে দেয়, গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষও চাইলেই উদ্যোক্তা হতে পারেন। সামান্য পুঁজি, অটল মনোবল ও কঠোর পরিশ্রমই হতে পারে বদলে যাওয়ার প্রধান উপাদান। তার সফলতা যেন আরও অনেকের জন্য পথ দেখায়—এটাই প্রত্যাশা।
আপনার মতামত লিখুন