পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে ক্ষোভে ফুসছেন বিনিয়োগকারীরা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ৭:০০
পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে ক্ষোভে ফুসছেন বিনিয়োগকারীরা

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল বুধবারও শেয়ারবাজারে নেমেছে দরপতনের ধারা। সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর কমেছে। লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বাজারে এই স্থবিরতা ও টানা দরপতনের কারণে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা আবারও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।

সূচক ও লেনদেন: কমেছে উভয়ই

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪.৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৫,০২২ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমে ১,১২১ পয়েন্ট এবং ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৭.৬৭ পয়েন্ট, যা এখন ১,৮৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১১৯টির দর বেড়েছে, ২১৪টির কমেছে এবং ৬২টির দর অপরিবর্তিত ছিল। মোট লেনদেন হয়েছে ৩০০ কোটি ৬ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৩৪০ কোটি টাকার চেয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা কম।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র। এখানে সিএসসিএক্স সূচক ৩৩.১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৮,৫৫০ পয়েন্টে, সিএএসপিআই কমেছে ৫৪.০২ পয়েন্ট (১৪,০১১), শরিয়াহ সূচক ৩.৫৭ পয়েন্ট কমে ৯১১ এবং সিএসই৩০ সূচক ৪৩.২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১১,৭৪৩ পয়েন্টে।

সিএসইতে মোট ২০৭টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে; এর মধ্যে ৭২টির দর বেড়েছে, ১১৩টির কমেছে এবং ২২টির অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেন হয়েছে মোট ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার, যা আগের দিনের ৬ কোটি টাকার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ: প্রধান দাবি—পদত্যাগ

বাজারের টানা পতনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভে ফুসছেন। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন এর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ না হলে বাজারে আস্থা ফিরবে না।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাজারে গতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তারা জানান, মাশরুর রিয়াজকে নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও বিতর্কের জেরে তা হয়নি। অথচ এখন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএসইসি প্রধানের অপসারণ দাবি উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মত

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের ব্যাংক খাত ও অন্যান্য খাতে সংস্কারের ছাপ পড়লেও পুঁজিবাজার এখনও তার বাইরে। বাজারে আস্থার সংকট কাটাতে হলে কার্যকর নীতিগত পরিবর্তন এবং নেতৃত্বে বিশ্বাসযোগ্যতা ফেরানো জরুরি।

তাদের মতে, এ মুহূর্তে প্রধান প্রশ্ন নেতৃত্বের যোগ্যতা নয়—আস্থা। বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিতে সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক হয়, তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যক্তিদের কার্যকারিতা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।