২৫শে বৈশাখে ঘুরে আসুন রবীন্দ্রনাথের আদিনিবাস: খুলনার পিঠাভোগ গ্রাম

বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রত্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বপুরুষদের আদিনিবাস ছিল খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে। শত শত বছর আগে ভৈরব নদীর তীরবর্তী এই গ্রামে গড়ে ওঠে ঠাকুর পরিবারের আদি বসতভিটা, যা ইতিহাসে কুশারীবাড়ি নামে পরিচিত। এখানকার কুশারী ব্রাহ্মণরা ছিলেন পরবর্তীকালে ঠাকুর বংশের পূর্বসূরি।
ঐতিহাসিক তথ্যে জানা যায়, শাল্ল্যি গোত্রীয় কুশারীরা আদিশুরের আমলে উত্তর ভারত থেকে বঙ্গদেশে আসেন। দ্বীননাথ কুশারীর বংশধর তারানাথ কুশারী ভৈরবপাড়ের এই গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তার ছেলে জগন্নাথ কুশারী, যিনি ভিন্ন জাতের কন্যা বিয়ে করে পীরালি ব্রাহ্মণে পরিণত হন, ছিলেন ঠাকুর পরিবারের আদি পুরুষ। বিয়ের পর তিনি শ্বশুরবাড়ি দক্ষিণডিহিতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন, যার সূত্র ধরেই দক্ষিণডিহির রায়চৌধুরী বংশের সাথে ঠাকুর পরিবারের আত্মীয়তার সূত্রপাত।
জগন্নাথ কুশারীর বংশধর পঞ্চানন কুশারী পরবর্তীতে কলকাতার গোবিন্দপুর গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। ইংরেজদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং “ঠাকুর” নামে পরিচিতি পান। এখান থেকেই ঠাকুর উপাধির শুরু। তার উত্তরসূরি নীলমণি ঠাকুর জোড়াসাঁকোয় ঠাকুর পরিবারের অভিজাত শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। এই পরিবারেই জন্ম নেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ব্যবসা, সমাজসেবা ও জমিদারিত্বে খ্যাতি অর্জন করেন। আর তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মের পথিকৃৎ মহর্ষি। দেবেন্দ্রনাথ ও সারদা দেবীর কোল আলো করে জন্ম নেন রবীন্দ্রনাথ, যিনি পরে বাংলা সাহিত্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বসভায় স্থান করে নেন।
আজও খুলনার সেই পিঠাভোগ গ্রামে কুশারীবাড়ির কিছু স্মৃতি রয়ে গেছে। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আদি দ্বিতল ভবনের অস্তিত্ব ছিল। ভৈরব নদের তীরবর্তী এই পল্লীগ্রাম রবীন্দ্রনাথের শিকড়ের ইতিহাস বহন করে চলেছে।
২৫শে বৈশাখে, বিশ্বকবির জন্মদিনে, আপনি চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন এই প্রাচীন জনপদ—রবীন্দ্র-পরিবারের আদি প্রাঙ্গণ।
আপনার মতামত লিখুন