সংগীতজ্ঞ ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ, গবেষক ও লেখক ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (১০ মে) ভোরে রাজধানীর বনানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
সংগীতশিল্পী ও তার কন্যা শারমিনী আব্বাসী গণমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন ড. আব্বাসী। শুক্রবার (৯ মে) শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ভোরেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতনামা সংগীত পরিবারে ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন কিংবদন্তি পল্লীগীতির শিল্পী আব্বাস উদ্দীন আহমেদ, যিনি বাংলার লোকসংগীতকে বিশ্বমঞ্চে পরিচিত করে তোলেন।
সাংগীতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা আব্বাসীর চাচা আব্দুল করিম ছিলেন ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। বড় ভাই মোস্তফা কামাল ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ছোট বোন ফেরদৌসী রহমান এবং ভাতিজি নাশিদ কামাল — দুজনই দেশের খ্যাতনামা সংগীতশিল্পী।
ড. আব্বাসী পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার সংগ্রহে ছিল কয়েক হাজার দুর্লভ লোকগান। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং শিল্পগোষ্ঠীর মহাব্যবস্থাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, নজরুলসংগীতসহ নানা ধরনের লোকসংগীত পরিবেশন করেছেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
একাধারে সংগীতজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও কবি ড. আব্বাসী রচনা করেছেন ২১টি গ্রন্থ। তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বই হলো মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিবেদিত ‘মুহাম্মদের না’। ইউনেস্কোর ছায়ায় ১১ বছর তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি ছিলেন।
জীবদ্দশায় তিনি একুশে পদকসহ বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হন।
তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন